শিক্ষার্থী ও পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল
রাজধানীর শনির আখড়া ও রায়েরবাগের রাস্তার দুই পাশে পরিবহন শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের অবরোধে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ শনিবার দুপুর ১২টায় শনির আখড়ায় এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ী থেকে শনির আখড়া পর্যন্ত গাড়ি আটকে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। অনেক যাত্রী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। তখন বাধ্য হয়ে হেটে গন্তব্যে রওনা হয় যাত্রীরা।
নাজমুল নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি চিটাগাং রোড থেকে হেটে ও রিকশায় শনির আখড়া পর্যন্ত এসেছেন। কিন্তু মিরপুরে যাওয়ার জন্য কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না।
নাজমুল জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কিন্তু এভাবে ভেঙে ভেঙে যেতে যেতে ধার-দেনার অবস্থা হয়েছে। যে অফিসে চাকরি করি সেখানে মাসের ১০ তারিখে বেতন হয়। কিন্তু এ কয়দিন রিকশা ও সিএনজিতে যেতে-আসতে হাতের টাকা সব শেষ হয়ে গেছে।
জামাল নামের এক যাত্রী জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জ যাবেন তাই ভাড়া করা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পরিবার নিয়ে উঠেছেন। কিন্তু শনির আখড়া আসার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকদল যুবক সিএনজি থেকে নেমে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আমরা খুব অনুরোধ করার পরেও তারা যেতে দেয়নি। এখন ভিন্ন উপায়ে যাওয়া যায় কিনা তা দেখছি।
পাঠাও-উবারে বাড়তি ভাড়া
এদিকে রাস্তায় কোনো ধরনের যানবাহন না থাকায় অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা পাঠাও এবং উবারে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনগুলো তিনগুণ ভাড়া চেয়েছে।
হিরন নামের এক ব্যক্তি বলেন, তিনি উত্তরায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সকালে সেখানে যাওয়ার জন্য পাঠাওর এক চালককে ফোন দিয়েছেন। সে চালক নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও তিন গুণ ভাড়া দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মোবারক নামের আরেক ব্যক্তি জানান, বাচ্চাকে টিকা দিতে টিকাটুলি থেকে স্কয়ার হাসপাতালে যাওয়ার জন্য উবারে গাড়ি ভাড়া করতে চেয়েছেন। কিন্তু গাড়ির চালক দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করছেন। তিনি বলেন, সুযোগ পেয়ে অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনগুলো যাত্রীদের হয়রানি করছেন।
রিকশা ভাড়া অস্বাভাবিক
রাজধানীতে গণপরিবহন কম চলছে বলে অনেকেই আজও রিকশাকে বেছে নেন। তবে রিকশাচালকরা অস্বাভাবিক হারে ভাড়া দাবি করেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী।
রাইশা নামের এক নারী জানান, মতিঝিল থেকে ফার্মগেট যাওয়ার জন্য তিনি রিকশা ঠিক করেছেন। রিকশাচালক ২০০ টাকার বিনিময়ে সেখানে গিয়েছেন। এভাবে চলতে গেলে এ মাসে বেতন ভাড়ার পেছনে চলে যাবে বলে জানান তিনি।
এদিকে মাহফুজ নামের এক রিকশাচালক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জীবনের ঝুকি নিয়ে রিকশা চালাই। তাই ভাড়া একটু বেশি নিতাছি। আর অনেক দূরে যাওয়া লাগে হের লাইগা ভাড়াটা বেশিনি। তয় পোলা-পাইন রিকশা আলাগোরে কিছু কয় না। আন্দোলন ভালাই হইতাছে।’
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ছাড়া আহত হয় বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। তারা যানবাহন ও চালকের লাইসেন্স তল্লাশি করছে। কোনো অনিয়ম পেলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশের কাছে মামলা করার জন্য। তারা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নয়টি দাবি করেছে। তাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার উচিত বলে জানান তিনি।
এরই মধ্যে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা বলেছেন, নিরাপদ বোধ না করা পর্যন্ত তারা রাস্তায় বাস নামাবেন না। ফলে অঘোষিত ধর্মঘট চলছে। গতকাল থেকেই আন্তজেলা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।