নিরাপদ সড়ক নিয়ে যা বললেন ইলিয়াস কাঞ্চন
নিরাপদ সড়ক চাই আজকে মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আপনারা জানেন যে ২৫ বছর ধরে এক রক্তক্ষরণ নিয়ে স্বজন হারিয়ে, সন্তানের মাকে হারিয়ে, আমি এ আন্দোলন শুরু করেছিলাম, আর যেন সড়কে রক্তক্ষরণ না হয়, অনেক বাধাবিপত্তির পরেও আমি দমে থাকিনি।’
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এসব কথা বলেন।
‘এ অবস্থা নিরসনের জন্য আমাদের সন্তানতুল্য কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা পর্যন্ত আজকে রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা উপলব্ধি করেছে যে তাদের একটা কিছু করা দরকার, নয়তো প্রতিদিনই তাদের সড়কে জীবন দিতে হবে, প্রতিদিন জীবন দেওয়ার চেয়ে সাময়িক অসুবিধা হলেও এর প্রতিবাদ করে যেন আমাদের দাবি আদায় করতে পারি, সড়ককে যেন নিরাপদ করতে পারি, সেই জন্য তারা আজকে রাস্তায় নেমে এসেছে, আমি তাদের সঙ্গে শুরু থেকেই সংহতি প্রকাশ করে এসেছি। তাদের যৌক্তিক দাবিগুলোকে আমি সমর্থন করে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘পরিবহন সেক্টর যে আজ উচ্ছৃঙ্খল হয়েছে এবং অমানবিক হয়েছে, তার জন্য আজকে এই মানববন্ধন।’
কাঞ্চন বলেন, ‘এই মানবন্ধনের মাধ্যমে সরকারকে, বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলতে চাই, এটি মানুষের প্রাণের দাবি, এ দেশের মানুষ সড়কে আর মরতে চায় না, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে গত আমাদের ২৫ বছর ধরে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা যদি এত দিনে বাস্তবায়িত হতো, তাহলে আজকে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। আমি বলব, আর সময়ক্ষেপণ করা উচিত নয়, যত সময় যাবে ততই জীবন যাবে।’ দেশে বিআরটিএ রেজিস্টার্ড গাড়ি ৩৫ লাখ, কিন্তু চালক ১৯ লাখ বলে জানান তিনি।
সড়ক পরিবহন বিষয়ে নতুন আইন পাস হওয়ার ব্যাপারে জনপ্রিয় নায়ক বলেন, ‘(সড়ক পরিবহন আইন নামে) নতুন আইনের খসড়া দ্রুতই পাস হওয়ার কথা, (আমাদের পক্ষ থেকে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময় অনেক প্রয়োজনীয় অনেক ব্যাপারে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল) সেখানে সেগুলোর অনেক কথাই অন্তর্ভুক্ত হয় নাই, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত না করে আইন পাস করলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।’
‘সড়ক নিরাপত্তা ও পরিবহন আইন’ হিসেবে এই আইন পাসের আহ্বান জানান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, তাহলেই প্রকৃত অর্থে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। শুধু ‘সড়ক পরিবহন আইন’র (এই নামের) মাঝে শুভংকরের ফাঁকি রয়ে গেছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে ড্রাইভারের এইট পাস, কিন্তু হেলপারের ফাইভ পাসকে যোগ্যতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু হেলপাররাই যেহেতু পরে চালক হয়, ফলে হেলপারেরও এইট পাস যোগ্যতা থাকতে হবে, তা না হলে হেলপারি করতে করতে কী করে হেলপাররা পড়াশোনা করবে।’
‘দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে চালকদের কারাদণ্ডের ব্যাপারে তিন বছরের প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই আইনে, অথচ হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল এ রকম ক্ষেত্রে সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান করা, সে ক্ষেত্রে তিন বছরের কারাদণ্ডের আইন পাস করা কি কোর্টকে কী করা হয় না, এ রকম প্রশ্নও রাখেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ আর বাড়াতে হবে বলেও হাইকোর্ট এক নির্দেশ দিয়েছিলেন।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘বিগত আন্দোলনগুলো থেকে আমি যে অভিজ্ঞতা পেয়েছি। দেখেছি, আমি যদি এই আন্দোলনে শামিল হতাম, তাহলে সমস্ত দোষ আমার গায়ে চাপিয়ে দেওয়া হতো, আন্দোলন বানচাল করা হতো। এর চেয়ে ছাত্ররাই নিজেরা নিজেদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, তাঁর মাহারা কন্যা এখন সন্তান সম্ভবা, এ সময় তাঁর কন্যার পাশে থাকার কথা, সে ব্যাপারে টিকেটও কেটেছিলেন তিনি। কিন্তু দেশে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন তাদের পাশে থাকতে তিনি কন্যার কাছে যাওয়া বাতিল করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার এক সন্তানের কাছে না গিয়ে এ দেশের হাজারো সন্তানের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছি।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কাঞ্চন বলেন, তারা যেন একটি গাড়িও ভাঙচুর না করে। তাহলে সুযোগসন্ধানীরা ১০টি বা ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলন বানচালের চেষ্টা করবে। খুব হুঁশিয়ার থাকার পরামর্শ তিনি বলেন, ‘তোমরা খেয়াল রাখবে তোমাদের মাঝে যেন অপশক্তি ঢুকে না যায়।’
আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সকল আশ্বাস যেন আগামী রোববার থেকেই বাস্তবায়ন শুরু করা হয়, সে আহ্বান জানান ইলিয়াস কাঞ্চন।