রাজশাহী ও বরিশাল সিটির ফল প্রত্যাখ্যান বিএনপির
আওয়ামী লীগের কাছে হেরে যাওয়া রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে জয় পাওয়া সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছে দলটি।
রাজশাহী ও বরিশালে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার সারা দেশের জেলা ও মহানগরগুলোতে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা জানান।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনের ফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ এটা কোনো নির্বাচনই হয়নি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট—এ তিনটি সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের নাটক শেষ হলো। এই নির্বাচনে আমাদের কথাই সত্য প্রমাণিত হলো, শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে না। প্রমাণিত হলো, এই অযোগ্য নির্বাচন কমিশিনের পরিচালনায় কোনো নির্বাচনেই জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব নয়। গাজীপুর ও খুলনার মতো এই তিনটি সিটি করপোরেশনে ভোট চুরি বা কারচুপি নয়, ভোট ডাকাতির মহোৎসব অনুষ্ঠিত হলো।’
ফখরুল বলেন, ‘বিরোধী দলগুলোর প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নয়, প্রতিপক্ষ এই অবৈধ সরকারের প্রশাসন এবং অযোগ্য নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন পুলিশের মতোই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। শুধু নির্বাচনের দিনে নয়, শিডিউল ঘোষণার দিন থেকেই পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড মাঠে নেমেছে। মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানি, হুমকি ও ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলের কর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে দূরে রাখা, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব আইন ভঙ্গ, শত শত অভিযোগে কোনো কর্ণপাত না করে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাকে আবারও ধ্বংস করল।’
ইসির বিষয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকেই আমরা বলে এসেছি, এই কমিশন আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট এবং অযোগ্য। তারা আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশের নির্যাতন বন্ধ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মানতে পুলিশকে বাধ্য করতে পারেনি।’
শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করছে। লক্ষ্য একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থা ভিন্নরূপে প্রতিষ্ঠা করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা। আওয়ামী লীগ এখন একটি গণবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে তারা জয়ী হতে পারবে না বলেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করে তারা জাতীয় সংসদের নির্বাচন করতে চায়। ২০১৪ সালের মতোই একতরফা নির্বাচন করার নীলনক্শা করছে। জনগণ তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দেবে না।’
বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘দেশে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই গণতন্ত্রের মাতা আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ বিরোধীদলীয় বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীন করতে হবে। বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সরকারকে আহ্বান জানাব কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে উপরোক্ত দাবিগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই তামাশা ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি এবং অবিলম্বে এই ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘সিলেটে এখনো ফলাফল ঝুলিয়ে রেখেছে। একমাত্র সেখানে আমাদের দল কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, সব জায়গাতে তারা সেটি পারেনি। আমাদের প্রার্থী নিজেই বলেছেন ভোট এমন না হলে তিনি এক লাখের বেশি ভোটে বিজয়ী হতেন। বরিশালে ধানের শীষের ব্যাজ পরে নৌকা মার্কায় সিল মেরেছে, কেন্দ্র দখল করেছে।’
‘ইভিএম গ্রহণযোগ্য নয়’
ফখরুল বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে ইভিএমে শুধু নৌকা প্রতীক ছিল। অন্য কোনো প্রতীক ছিল না। আমরা এখনই বলে দিচ্ছি ইভিএম আমাদের দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগেও সংবাদ সম্মেলনে আমরা এ মেশিনে কীভাবে জালিয়াতি করা যায়, সেটি দেখিয়েছি।’
সজীব ওয়াজেদ জয়ের জরিপের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘তিনি সব সময় বিদেশে থাকেন, তাই তাঁর চিন্তাভাবনা বিদেশিদের মতো। তিনি যে জরিপ দিয়েছেন, সেটিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। এটা তার নিজের লোক দিয়ে তৈরি করা একটা জরিপ।’ ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সব সময় মিথ্য বলেন। কিন্তু তিনি এসব মিথ্যা বলার আগে কখনো চিন্তা করেন না। তাঁর মতো একজন ব্যক্তি এসব কীভাবে বলেন আমার বুঝে আসে না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুল হাই, আবদুস সালাম, মেহেদী হাসান রুমি।
রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী যথাক্রমে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। সিলেট সিটিতে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ হলে নির্বাচিত আর ১৬১ ভোট পেলেই চলবে তাঁর।