ফোর স্টেজের ক্যানসার হলে উনি মারা যাবেন : প্রধান বিচারপতি
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত নোয়াখালীর সুধারামের আবদুল কুদ্দুসকে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
একই সঙ্গে আবদুল কুদ্দুসের অসুস্থতা নিয়ে আগামী ২ আগস্টের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকদের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আসামির জামিন বিষয়ে আদেশ দেবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
ক্যানসারে আক্রান্ত আসামির করা জামিন আবেদনের ওপর আপিল শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টা সময় নির্ধারণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরে নির্ধারিত সময়ে এজলাসে বসেন বিচারপতিরা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যার্টনি জেনারেলের অনুপস্থিতিতে প্রথমে আদালত আদেশ মুলতবি করেন। এর একটু পরেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে উপস্থিত হন।
এ পর্যায়ে আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমি আইজি প্রিজন্সের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, আবদুল কুদ্দুস ক্যানসারে আক্রান্ত ঠিক। তবে তার অবস্থা ততটা গুরুতর নয়, সেন্স আছে কথা বলতে পারেন। মারা যাবেন এমন অবস্থা না।’ এর পরে আদালত আদেশের জন্য ২ আগস্ট ঠিক করে আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে কুদ্দুসের জামিনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আসামির (আবদুল কুদ্দুস) বয়স ৮৭ বছর। তাঁর ফোর স্টেজের ক্যানসার। উনি একা হাঁটাচলা করতে পারেন না। কারো সহযোগিতা ছাড়া চলা সম্ভব হয় না। তাই আসামির জামিন চাইছি।’
জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমরা অসুস্থতার বিষয়ে মেডিকেল (রিপোর্ট) প্রতিবেদন চাই।’ এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘ফোর স্টেজের ক্যানসার হলে তো উনি মারা যাবেন।’
এর আগে আপিল বিভাগে জামিনের বিষয়ে শুনানির জন্য আজকের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের (কজ লিস্ট) কার্যতালিকার ৮ নম্বরে ছিল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এই প্রথম কোনো আসামির জামিন আবেদন করা হয়েছে কোর্টের আপিল বিভাগে।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এর আগে এই আসামির আপিল আবেদন করা হয়। আপিলের সঙ্গে জামিন আবেদনও করা হয়। কিন্তু এর আগে আর কোনো আসামির জামিন আবেদন করা হয়নি। এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামির মামলায় আপিল বিভাগে জামিন চাওয়া হয়েছে।
গত ১৩ মার্চ এই মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাঁদের মধ্যে আমির আলী, মো. জয়নাল আবদিন ও আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুরের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। একই মামলায় অপর আসামি মো. আব্দুল কুদ্দুসকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।