‘শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ঢোকার সময় অপরিচিত একজন এসে আমাকে সালাম দেয়। এ সময় আরেকজন পেছন থেকে এসে আমাকে টেনে গাড়িতে তোলে। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নাকে একটা রুমাল ধরে। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।’

এভাকেই অপহরণের বর্ণনা দেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা পারভেজ হোসেন সরকার।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর লালমাটিয়ার সি ব্লকে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের কথা এসব বলেন পারভেজ সরকার।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পারভেজ সরকার বলেন, ‘গাড়িতে তোলার পর আমার হাতে হাতকড়া পরিয়ে গাড়ির হাতলের সঙ্গে লাগিয়ে রাখে। তবে তারা আমাকে কোনো ধরনের নির্যাতন করেনি।’ তাঁর ধারণা, তাঁকে যে কারণে ধরে নেওয়া হয় হয়েছিল, সরকার ও গণমাধ্যমের কারণে দুর্বৃত্তরা তাদের মোটিভ চেঞ্জ করে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে।

পারভেজ বলেন, ‘আমাকে মারধর করা হয়নি, তবে অজ্ঞান করা হয়েছিল। এ ঘটনায় আমি আতঙ্কিত।’ তিনি বলেন, তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আমার যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন তারা আমাকে গাড়ির ভেতরে বসেই দুটি সাদা স্ট্যাম্পে ইংরেজি ও বাংলায় দুটি সই নেয়। তবে কেন সই নিয়েছে আমি বুঝতেছি না। হয়তো তারা আমাকে কোনো চাপে রাখতে এটি করেছে। সই নেওয়ার পর আমাকে কাঞ্চন ব্রিজের ওখানে নামিয়ে দেয়। এরপর আমি বাসায় ফোন দেই, পরে পরিবারের লোকজন গিয়ে ৩০০ ফিট এলাকা থেকে আমাকে নিয়ে আসে।

অপহরণকারীদের উদ্দেশ্য কী জানতে চাইলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ আসন (তিতাস-হোমনা) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী পারভেজ বলেন, ‘আমি কিছুই বুঝতেছি না। আমার সঙ্গে কারো ব্যবসায়িক বিরোধ নেই। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে, তারাই বিষয়টি বের করুক।’

এর আগে গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর লালমাটিয়ায় জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় পারভেজ হোসেন সরকারকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এর পরপরই ঘটনার তদন্ত করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনার ১১ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাত সোয়া ১২টায় পূর্বাচলের ৩০০ ফিট রোড এলাকায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। সেখান থেকে তাঁর পরিবার ও পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ‘অপহরণ বা জোর করে তুলে নেওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। তা অস্পষ্ট থাকায় অপহরণকারীদের চেনা যায়নি। তাদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।’

পারভেজ হোসেনের খালাতো ভাই ফাহাদ ভূঁইয়া জানান, পারভেজ হোসেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ (তিতাস-হোমনা) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঢাকার লালমাটিয়ার বাসায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন। প্রত্যক্ষ কোনো প্রতিপক্ষ তাঁর নেই যারা এ ধরনের কাজ করতে পারে।