শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা, শিক্ষক বরখাস্ত
দশম শ্রেণির ছাত্রীকে কোচিং করানোর কথা বলে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে প্রেম নিবেদন ও শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার রাতে খুলনা মডেল থানায় হেনস্তার শিকার ওই ছাত্রীর বাবা এ মামলা করেন।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্কুলশিক্ষক উত্তম কুমার বিশ্বাস ওরফে আবুল কালাম আজাদ পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনার জের ধরে অভিযুক্ত উত্তম কুমারকে বরখাস্ত করেছে সেন্ট জেভিয়ার্স হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত উত্তম পাঁচ বছর আগে এই স্কুলের লাইব্রেরিয়ান হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু তিনি নিয়মিত ক্লাসও নিতেন।
এদিকে স্কুল শিক্ষকের এই অনৈতিক ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ার পর থেকে স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত শিক্ষক দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে মোবাইল ফোনে কল করে কোচিংয়ে আসতে বলেন। মেয়েটি পড়ার প্রস্তুতি নিয়ে কোচিং গিয়ে দেখে সেখানে অন্য কোনো শিক্ষার্থী নেই। পরে মেয়েটি কোচিংয়ে ঢুকলে উত্তম কুমার বিশ্বাস তাকে বলেন- ‘তোমার পরীক্ষার সব আমি দেখব, কিন্তু আমার সাথে প্রেম করতে হবে। আমাকে তোমার কিছু দিতে হবে।’ এ সময় ওই শিক্ষক মেয়েটির শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন।
এর পর ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ঘটনার কথা জানায় এবং স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
পরে ওই দিনই ছাত্রীর বাবা সোনাডাঙ্গা থানায় গিয়ে এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে পুলিশ ছাত্রীটির জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
হেনস্তার শিকার ওই স্কুলছাত্রীর বাবা এনটিভি অনলাইনকে জানান, কোচিং থেকে ফিরে আমার মেয়ে খুব কান্নাকাটি করছিল। পরে তার মার কাছে ঘটনার কথা খুলে বলে সে। এর পর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়।
সেন্ট জেভিয়ার্স হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশের কাছ থেকে তিনি এ ঘটনা প্রথম জানতে পারেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই শিক্ষার্থীও স্কুলে আসছে না। পরে তিনি ওই শিক্ষার্থীকে বুঝিয়ে স্কুলে ফিরিয়ে আনেন।
প্রধান শিক্ষক আরো জানান, সব শিক্ষাসনদে অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম উত্তম কুমার বিশ্বাস হলেও স্কুলের সবার কাছে তিনি আবুল কালাম আজাদ নামে পরিচিত। স্কুলের নথি খুঁজে দেখা যায় উত্তম কুমার বিশ্বাস বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক। বিয়ের সময় তিনি নাম পরিবর্তন করে আবুল কালাম আজাদ রাখেন।
এদিকে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টার ঘটনাটি প্রচার হয়ে গেলে স্কুলের ছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অভিভাবকরা দলবদ্ধ হয়ে স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে তিনি বুধবার বিকেলেই ম্যানেজিং কমিটির বৈঠক ডাকেন।
এ বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহমেদ বলেন, ঘটনার পর থেকে সেই শিক্ষক পলাতক। স্কুলেও যান না, কোচিং সেন্টার বন্ধ। স্কুলটি সোনাডাঙ্গা মডেল থানার আওতায় পড়ে। তবে কোচিং সেন্টার বা ঘটনাস্থল নিরালা আবাসিক এলাকায়। ফলে এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন খুলনা মডেল থানায় পাঠানো হয়েছে। বুধবার রাতে খুলনা থানায় এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে খুলনা মডেল থানার কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা শফিক আহমেদ জানান, গতকাল বুধবার রাতে আবুল কালাম আজাদের নামে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।