বাবার বিয়ের আগেই ছেলের জন্ম!
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ছেলে মো. জোবায়েরের জন্ম হয়েছে তাঁর বাবা মো. গিয়াস উদ্দিনের বিয়ের আগেই। জোবায়ের রাজবাড়ী সরকারি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছেন, অথচ তাঁর সরকারি চাকরির আবেদনের বয়সই শেষ! এই জটিলতার কারণে তিনি সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা দিতে পারছেন না।
রাজবাড়ীসহ ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন অফিসে বারবার যোগাযোগ করেও ঠিক করতে পারছেন না নামসহ বয়সের জটিলতা। এসব বিষয়ে যোগাযোগ করলে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, এটা ঠিক করতে পারবেন না জোবায়ের। অথচ জন্মসনদ, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেটে মো. জুবায়েরের জন্ম তারিখ ২ জানুয়ারি ১৯৯৫। শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর জন্ম তারিখ ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। এসব নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই জোবায়েরের।
জোবায়ের আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি ২০১১ সালে এসএসসি পাস করেছি। এরপর এইচএসসি পাসসহ এখন রাজবাড়ী সরকারি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছি। আমার সার্টিফিকেটে জন্ম তারিখ দেওয়া ১৯৯৫ সালের ২ জানুয়ারি। অথচ আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখ দেওয়া ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আমার বাবা বিয়ে করেছেন ৮৮ সালের শেষের দিকে। তার মানে আমার বাবার বিয়ের আগেই আমার জন্ম হয়েছে।’
জোবায়ের বলেন, ‘২০০৮ সালে আমার বয়স মাত্র ১৩ বছর ছিল। ওই সময় একটি রাজনৈতিক দলের কিছু বড় ভাই আমাকে ভোটার হওয়ার জন্য বলেন। আমি আসলে তখন নির্বাচন সংক্রান্ত কিছুই বুঝি না। এরপরে ওই বড় ভাইয়েরা যোগাযোগ করে আমাকে ভোটার করে দেন। ওই সময় তাঁরা আমার নাম মো. জোবায়ের পরিবর্তে মো. মামুন মোল্লা লিখেন, পিতা মো. গিয়াস উদ্দিনের পরিবর্তে মো. গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, মাতা রাজিয়া বেগমের পরিবর্তে জামিলি এবং জন্ম তারিখ ১৯৯৫ সালের ২ জানুয়ারির পরিবর্তে দেওয়া হয় জন্ম ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। এখন সার্টিফিকেটের বয়স অনুযায়ী আমার বয়স হওয়ার কথা ২৩ বছর ৫ মাস, অথচ জাতীয় পরিচয়পত্রের হিসেবে এখন আমার বয়স ৩০ বছর ৪ মাস। তার মানে ছাত্র থাকার সময়ই আমার সরকারি চাকরি পরীক্ষা দেওয়ার বয়স শেষ!’
জোবায়ের আরো বলেন, ‘এর আগেও আমি কয়েকবার চেষ্টা করেছি এসব ঠিক করতে কিন্তু ঠিক করতে পারেনি। এই বছরের শুরুর দিকে আমি একটি সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে পারিনি। সামনে পুলিশের লাইনে দাঁড়াবো, কিন্তু আমার তো বয়সে কুলাচ্ছে না।’
জোবায়েরের অভিযোগ, ‘এই বিষয়ে কয়েকবার নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করেও হতাশ হয়েছি। গতকাল বুধবার সর্বশেষ আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের সরকারী পরিচালক ফারহানা বেগমের কাছে গেলে তিনিও হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। অথচ স্থানীয় নির্বাচন কমিশন এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন কমিশন সুপারিশ করেছে আমার জন্য। এটা সংশোধনের প্রক্রিয়া হিসেবে আমি জাতীয় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপনও দিয়েছি। তবু যেন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।’
জোবায়ের আরো বলেন, ‘শুধু যে চাকরির পরীক্ষা দিতে পারব না তা তো নয়। আমি ওয়ারিশসূত্রে আমার বাবার সম্পত্তিও পাব না। আমার পরবর্তী প্রজন্মও আমার এই ভুলের দায় বহন করবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিইএ প্রকল্পের সরকারী পরিচালক ফারহানা বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জুবায়ের ২০০৮ সালে ভোটার হয়েছেন। সে কারণেই হোক না কেন, বয়স না হওয়ার পরও ভোটার হওয়া তো একটি বড় অপরাধ এবং আমরা তো জানি না ওই ছেলে জালিয়াতি করতে এসেছেন কি না। হতেও তো পারে সে অন্যের সার্টিফিকেট নিজের নামে চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’
সহকারী পরিচালক আরো বলেন, ‘আমি আবারও রাজবাড়ী নির্বাচন অফিসে তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি। তারা তদন্ত করে দেখবে যে, ওই ছেলের সব কিছু ঠিক আছে কি না। এবং সে কোনো ধরনের প্রতারণার চেষ্টা করছে কি না। সব ঠিক যদি ঠিক থাকে তবে সে সংশোধনের সুযোগ পাবে।’