‘আমি পরীক্ষিত, বেইমানি করব না’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারের আজ শেষ দিন।
শেষ দিনের প্রচারে গিয়ে গাজীপুরবাসীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ‘আমি আপনাদের পরীক্ষিত মানুষ, আমি আপনাদের সঙ্গে বেইমানি করব না।’
জাহাঙ্গীর আলম সকাল ৮টা থেকে কাউলতিয়ার সালনা এলাকায় তাঁর গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময়ে তাঁর সঙ্গে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গণসংযোগ করেন।
বিকেলে কোনাবাড়ীতে পথসভা শেষে জয়দেবপুর, গাছা ও টঙ্গী এলাকায় গণসংযোগ করবেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। আগামী মঙ্গলবার এই সিটি করপোরেশনের ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রচারের শেষ দিনে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার কাজের মাধ্যমে এবং শ্রমের মাধ্যমে, গাজীপুরের প্রত্যেক মানুষকে এখানে শান্তি-শৃঙ্খলা অবস্থায় আমি তাদের রাখতে চাই। সব ধর্মের মানুষ, সব পেশার মানুষ, সব বয়সের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করবে। তাদের সবার দায়িত্বটা রাখতে চাই। আজ পর্যন্ত আমাদের গাজীপুরে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিরোধীদলের কোনো ভাই-বন্ধুদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয় নাই। কোনো ধরনের চিটিং আমরা করি নাই।’
‘কারণ আমরা বিরোধী দলকে নিয়েই এখানে রাজনৈতিকভাবে বলেছি যে আসুন, আমি আমার নয়, আমি বিএনপির প্রার্থীরও প্রতিদিন খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তাঁর শারীরিক অবস্থা কী, তাঁর কোনো নেতাকর্মী কোনোভাবে হয়রানি হয় কি না। কোনো ধরনের সামাজিকভাবে প্রতিবন্ধকতা হয় কি না।’
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরো বলেন, ‘জানেন আপনারা, তারা ৪০ বছর কোনো না কোনো দায়িত্বে ছিল। সে সময় তারা অনেক কাজ করে নাই, তারা ভবিষ্যতে কী কাজ করবে, সেই বিষয়ে কিছু বলে নাই। তার পরও তিনি যেহেতু বয়সে মুরব্বি, আমি সব সময় উনাকে সামনে দিয়ে, আমি আমার কাজগুলো করেছি।’
জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, ‘আমি বলেছি, শুধু আওয়ামী লীগ নয়, আওয়ামী লীগ ছাড়া যারা এখানে যত লোক আছে, আমি সবারই গার্ডিয়ান হিসেবে, আমি একজন কর্মচারী হিসেবে কাজটা করে দিতে চাই। প্রশাসন হচ্ছে সত্যের পক্ষে। প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব হচ্ছে, সত্যের পক্ষে থাকা, জনগণকে সহযোগিতা করা, আমি এইটাই প্রশাসনের কাছে চেয়েছি। আমি প্রতিদিনই খেয়াল রাখছি, নির্বাচন কমিশনে যাঁরা আছেন, সরকারি দায়িত্বে যাঁরা আছেন, কোনো মানুষের যেন, কোনো নাগরিকের যেন ক্ষতি না হয়। এমন কিছু যেন তারা না করে। এই নাগরিক আমাদের, তাদের জানমালের রক্ষা করার সবকিছুর দায়িত্ব হলো আমাদের, কোনোভাবেই একজন সাধারণ মানুষ যাতে কারো দ্বারা হয়রানি না হয়। সেটা আমি দিনরাত সজাগ থেকে সেটা খেয়াল রাখি। এবং আমি সারা জীবনই রাখব, যেন আমাদের গাজীপুরবাসীর কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়।’
অন্যদিকে আজ শেষ দিনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ চাইছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।
এদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০১৮ উপলক্ষে নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ লগ্নে। এরই মধ্যে আমরা নির্বাচনের মালামাল সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন কেন্দ্রে বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। এবং ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তাদেরও কেন্দ্রভিত্তিক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। বিজিবি, র্যাব, আনসার এরই মধ্যে শহরে ঘোরাফেরা করছে। এবং তাদের আগামীকাল একটা প্রশিক্ষণ আছে, প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ। সেই প্রশিক্ষণে সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন।’
নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ৩১ মার্চ। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট গত ৬ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেন। এতে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচনী সব ধরনের কার্যক্রম।
পরে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশন। শুনানি শেষে ওই স্থগিতাদেশ স্থগিত করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ জুন মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে দ্বিতীয় দফায় ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। নতুন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী ১৮ জুন থেকে এ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।
এ ছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪ প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১।