তাঁদের ঈদ রাস্তায়
শাহাজাহান মিয়ার (৬৫) বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। গত তিন বছর ধরে ঢাকায় ভিক্ষা করে জীবন চালান। শারীরিকভাবে নেই কাজ করার ক্ষমতা। ঈদের দিন মুখ ভার করে ফুটপাতে বসে আছেন। কেউ দুই-পাঁচ টাকা দিলে তা নিচ্ছেন। শাহাজাহান মিয়ার গায়ে ঈদের নতুন জামা নেই। পোলাও মাংস খেতে পারবেন কি না, তাও জানেন না!
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে আজ শনিবার ঈদুল ফিতরের দিন কথা হয় শাহাজাহান মিয়ার সঙ্গে। ফুটপাতে ভিক্ষা নিচ্ছিলেন নিলুফা (৭০) নামে এক নারী। তিনি ১০ বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। বয়সের ভারে ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। তিনি নোয়াখালীর মাইজদির বাসিন্দা। কিন্তু পেটের দায়ে বৃদ্ধ বয়সে ঢাকার কারওয়ানবাজারে ভিক্ষা করেন। আর ফুটপাতে ঘুমান।
শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘তিন বছর ধরে ঢাকায় ভিক্ষা করি। বউ আমেনা বেগম মারা গেছে তিন বছর আগে। ছেলে মেয়েরা থাকলেও তারা দেখে না। তারা ঈদের দিন খাইতেও ডাকে নাই।’
সাংবাদিক পরিচয় দিলে শাহজাহান বলেন, ‘বাবা (প্রতিবেদকে) ছেলে মেয়ে যার যার কাজ নিয়ে আছ, তাগো খাওন তারা খায়। ওরা নিজেরাই চলতে পারে না। আমারে কী দেখব!’
শাহজাহান বলেন, ‘আগে জমিতে চাষ করতাম। আইজ ঈদের দিন সকালে একজন হোটেলে খাওয়াইছে। কারওয়ানবাজারে থাকি, ঘুমাই। ছয় মাসে একদিন বাড়িতে যাই। নাতিরা আছে বাড়িতে। জামা কাপড় কিছু পাই নাই, আগে অনেকে দিত আর এখন দেয় না।’
শাহজাহান বলেন, ‘ছয় মাস পর বাড়িতে গেলে তার (স্ত্রী) কবরে যাই। বড় ওসুখ হইছিল বউডার, টাকা নাই তাই মইরা গেছে।’ বলেই হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকেন শাহাজাহান মিয়া।
নিলুফা বলেন, ‘মাইয়া আর আমি এক লগে কাওরানবাজারে থাহি। ঈদের দিন কোনো খাওন ফাই(পাই) নাই। কোরফানি (কুরবানি) ঈদের সময় মাইয়া গোস্ত (মাংস) টোহাই টোহাই(খুজে খুজে) আনে। এর হরে (পরে) হেতি রান্দি দেয়। হে সময় কিছু খাওন যায়। রোজার ঈদে কোনো খাওন হাই (পাই) না।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঈদ বড়লোক ওলাগো। আঙ্গো (আমাদের) সব দিনই এক রকম। আল্লা আঙ্গোরে এন্নে (এমন) রাইখছে। কিতা আর কইত্তাম। বাঁচি আছি যত দিন এন্নে (এভাবে) থাকন (থাকা) লাইগব।’