‘ওরা প্রকাশ্যে ডেকে ডেকে ইয়াবা বিক্রি করে’
রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের ভেতরের গলিতে এবং বাইরের রাস্তায় মাদক ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকদ্রব্য বিক্রি করে আসছে। রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষকেও তারা বিশেষ ঢঙে ডাক দেয় ইয়াবা কেনার জন্য।
আর জেনেভা ক্যাম্পের এই গ্রুপের মাধ্যমেই মোহাম্মদপুরের অলিগলিতে ছড়িয়েছে ইয়াবা। এসব মাদক ব্যবসায়ী ওই এলাকার ছিনতাইয়ের সঙ্গেও জড়িত। এলাকাবাসী জানায়, ওরা মানুষকে রাস্তায় প্রকাশ্যে ডেকে ডেকে ইয়াবা বিক্রি করত।
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অবশেষে আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সেই ক্যাম্পে অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। বিশাল শোডাউন করে র্যাবের বিশেষ অভিযানে আটক হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও নানা ধরনের মাদকদ্রব্য।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে শনিবার মাদকবিরোধী অভিযানে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে র্যাব। ছবি : ফোকাস বাংলা
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান ওই ক্যাম্পকে মাদকপল্লি উল্লেখ করে বলেন, ‘এখানে কেউ কেউ পারিবারিকভাবেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কোনো কোনো পরিবারে সবাই মাদক ব্যবসা করে। যে কারণে এখানে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীর সংখ্যা অনেক। তবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে জেল-জরিমানা করা হবে।
জেনেভা ক্যাম্পের পাশের দোকানদার আলম হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখানে প্রকাশ্যে দিনের বেলায়ও মাদক বেচাকেনা হয়। এক শ্রেণির তরুণ পলিথিনে মুড়িয়ে প্রকাশ্যে হাতে নিয়ে ইয়াবা ও হেরোইন বিক্রি করে। মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে গত কয়েকদিন ধরে তাদের দেখা যাচ্ছে না।’
এদিকে ‘মাদকপল্লী’ খ্যাত মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে র্যাবের বিশেষ অভিযানে আনন্দ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। তারা মনে করেন, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে শুধু জেনেভা ক্যাম্প নয়, পুরো মোহাম্মদপুরকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব হবে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে শনিবার মাদকবিরোধী অভিযান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমাণ্ডার মুফতি মাহমুদ খান। ছবি : এনটিভি
এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম সায়েম বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য রাস্তা দিয়ে চলা যায় না। তারা কাউকে হেঁটে যেতে দেখলেই ডাক দেয়। ডাকতে ডাকতে খুব কাছে চলে আসে। তখন ভয়ও লাগে।’
বাবুল নামে আরেকজন বলেন, ‘এখানকার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে, বাচ্চা নিয়ে স্কুলে পর্যন্ত যাওয়া যায় না। স্কুলড্রেস পরা বাচ্চা সঙ্গে থাকলেও তারা ডাকে। বাচ্চা মাঝে মধ্যে জিজ্ঞেস করে, বাবা ওরা ওভাবে ডাকে কেন? উত্তর দিতে পারি না। কৌশলে এড়িয়ে যাই।’
ক্যাম্পের পাশেই মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ওই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাসমিমা বলেন, ‘বাচ্চা নিয়ে যখন স্কুলে আসা-যাওয়া করি, তখন পুরোটা পথ আতঙ্কে থাকতে হয়। ওদের চাহনি দেখলেই ভয় লাগে।’
তাসমিমা আরো বলেন, ‘এই ক্যাম্পের এক দিকে মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, এক দিকে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা এখান থেকে আসা যাওয়া করে। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীরা এতটাই প্রকাশ্যে নেমে এসেছে যে, এর প্রভাব কোমলমতি শিশুদের ওপর পড়ছে।’
এলাকাবাসী বলেন, একদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযান চালালেই এখানে মাদক ব্যবসা নির্মূল করা সম্ভব নয়। বারবার র্যাবের অভিযান দরকার।