‘এখানে ধনী-গরিব সবাই এক কাতারে’
চলছে ইফতারের আয়োজন। মসজিদের ভেতর সবাই অপেক্ষা করছেন আজানের। কেউ কেউ রোজাদারদের দিকে ইফতারের প্লেট এগিয়ে দিচ্ছেন। কখনও এগিয়ে দিচ্ছেন শরবতের গ্লাস। এমনই একজন রাজধানীর কাজীপাড়ার মো. ইব্রাহিম। তিনি বললেন, ‘প্রতিদিন বহু মানুষ মসজিদে ইফতার করে। আমার ভালো লাগে। এখানে ধনী-গরিব সবাই এক কাতারে বসে ইফতার করে।’
রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ার কেন্দ্রীয় মসজিদে ইফতার করছিলেন ইব্রাহিম। রাজধানীর মসজিদগুলোতে বহু মানুষ ইফতার করেন। সর্বস্তরের মানুষ একসঙ্গে ইফতার করেন। এখানে ধনী-গরিবের কোনো ভেদাভেদ নেই।
শাহবাগ থেকে মিরপুর যাচ্ছিলেন সোহাগ হোসেন নামের এক সরকারি কর্মকর্তা। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে দেখে ঢুকে পড়েন কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদে। সবার সঙ্গে ইফতার করলেন। সোহাগ বলেন, ‘বহুদিন পর আজ মসজিদে ইফতার করে ভালো লাগছে।’
সোহাগের পাশেই ছিলেন শফিকুল ইসলাম। তাঁর এক পা নেই। তিনি ভিক্ষা করেন। বাসে বা কখনো আবার কাজীপাড়া ওভারব্রিজের উপরে বসে ভিক্ষা করেন। তিনি বলেন, ‘সব দিন এহানেই ইফতার করি। সবাই ইফতার করে এহানে।’
কেন্দ্রীয় মসজিদে ইফতার প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করছিলেন মো. ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে প্রতিদিন ইফতার সিাজিয়ে দেই সবাইকে। আমার বাসা এখানেই। আজ ২২৫ প্লেটের আয়োজন করা হয়েছে। শরবত, ছোলা, মুড়ি, খেজুর, চপ, বেগুনি, জিলাপিসহ বিভিন্ন ধরনের আইটেম থাকে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন ফলও থাকে।’
কেন্দ্রীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. গোলাম আজম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রতিদিন মসজিদের টাকায় ইফতার কেনা হয়। তবে এই টাকা আসে এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে। এছাড়াও মসজিদে যে টাকা উঠে নামাজের সময় সেই টাকাও ব্যয় করা হয় ইফতারে।’
কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে একটু দূরেই কাজীপাড়া জামে মসজিদ। সেখানে দেখা যায়, বৃদ্ধ, শিশু, মধ্যবয়স্কসহ ১৮জন বসে আছেন। সেখানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ছাত্র মোহাম্মদ সজীব ও স্থানীয় বাসিন্দা মো. হান্নান হোসেন ইফতার তৈরিতে ব্যস্ত। তারা দুজন মাটির থালাতে ইফতার সাজাচ্ছেন। বাকি সবাই শরবতের গ্লাস সামনে নিয়ে বসে আছেন।
মোহাম্মদ সজীব বলেন, ‘প্রতিদিন এখনে ইফতার প্লেটে সাজিয়ে দেই। মসজিদের পাশেই থাকি। মসজিদে একদিন না এলে খারাপ লাগে। এখানে মূলত ছোট ছোট শিশুরা ইফতার করে। এদের কারো বাবা-মা কিংবা পরিবার নেই। এখানে সেখানে থাকে।’
ওই মসজিদেই ইফতার করছিল নয় বছরের শিশু আবুল হোসেন। কাজীপাড়ার একটি বস্তিতে থাকে আবুল। লেগুনার হেলপার হিসেবে কাজ করে। আবুল হোসেন বলে, ‘আজ শইলডা ভালো না। খুব কষ্ট হচ্ছে, জ্বর আছে। আজ কাজে যাইতে পারি নাই।’ ওর পাশেই ছিল ১০ বছরের ইরফান আলী। ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। ইরফান বলে, ‘আমি ভিক্ষা করি। কাজ করতে পারি না। মা আছে, আব্বু নেই। ছোডো বোন স্কুলে যায়। মা লোকের বাসায় রান্নার কাজ করে। আমারেও সংসারে ট্যাকা দেওন লাগে। এইহানে ইফতার করি প্রতিদিন।’