২৮ জুনের মধ্যে গাজীপুরে ভোটের নির্দেশ
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আগামী ২৮ জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সীমানা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) করা আপিল নিষ্পত্তি করে আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছেন।
সকাল পৌনে ১০টায় তিন পক্ষের আপিল শুনানি শুরু হয়। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিরতি দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা তিন পক্ষের শুনানি চলে। বক্তব্য দেন রিট আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবীও।
শুনানি শেষে ‘একটু পরেই আদেশ দেওয়া হবে’ জানিয়ে এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় যান প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিরা। পরে দুপুর ১টার দিকে আদালতে এসে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ বাতিল করে আগামী ২৮ জুনের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে ছিলেন জয়নাল আবেদীন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে ছিলেন এম আমিন উদ্দিন আর ইসি পক্ষে ছিলেন ওবায়দুল রহমান মোস্তফা।
গত ৬ মে সীমানা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই নির্বাচন স্থগিতাদেশ দেন।
পরদিন ৭ মে নির্বাচন স্থগিতের বিরুদ্ধে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ও ৮ মে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন। সর্বশেষ গতকাল বুধবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে আবেদন করা হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন ১৫ মে হওয়ার কথা। প্রচার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ভোটের মাত্র নয় দিন আগে রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশে একই সঙ্গে ঢাকার সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না—এ মর্মে রুলও জারি করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ।
৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত। এখানে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। গত ৪ মার্চ সিটি করপোরেশনের সীমানা নিয়ে গেজেট জারি হয়। যেখানে শিমুলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়বাড়ী, ডোমনা, শিবরামপুর, পশ্চিম পানিশাইল, পানিশাইল ও ডোমনাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
রিটের পক্ষে আইনজীবী জানান, ২০১৩ সালে এ ছয়টি মৌজাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ আবেদন করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রাহ্য না করায় হাইকোর্টে রিট করার পর আদালত আবেদনটি পুনর্বিবেচনা করতে নির্দেশ দেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে এ ছয়টি মৌজা শিমুলিয়ার মধ্যেই ছিল। নির্বাচনে আজহারুল ইসলাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এখন আবার এ ছয় মৌজাকে গাজীপুর সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেহেতু তিনি ছয়টি মৌজার ভোটেও নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাই এ ছয়টি মৌজাকে সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত ওই আদেশ দেন।