৯ ঘণ্টা খুঁটিতে বেঁধে নারীকে বর্বর নির্যাতন

ভরণ-পোষণ চাওয়ায় এক নারীকে নয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্বামীর পরিবারের লোকজন নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের সময় প্রচণ্ড তৃষ্ণায় পানি খেতে চাইলে ওই নারীর মুখে প্রস্রাব ঢেলে দেওয়া হয়। এমনকি ক্ষতস্থানে মরিচের গুঁড়ামিশ্রিত পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
urgentPhoto
অমানবিক ও নির্মম এ ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল শাল্লা উপজেলায়। নির্যাতিত নারী উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের ভাতগাঁও গ্রামের মহসিন মিয়ার স্ত্রী রাহেলা খাতুনকে পরে পুলিশ উদ্ধার করে রক্তাক্ত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাহেলার শরীরে ছুরি ও লোহা দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দুদিন চিকিৎসার পরও কোমরের আঘাত পাওয়ায় তিনি হাঁটাচলা করতে পারছেন না।
আজ রোববার সকালে শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, নারী ওয়ার্ডের একটি বিছানায় আহত রাহেলা শুয়ে আছেন। সারা শরীরে ক্ষতচিহ্ন, কালসিটে দাগ। স্থানে স্থানে ব্যান্ডেজ বাঁধা। তাঁর পাশে পরিবারের তেমন কেউ নেই। দুই বছরের ফুটফুটে মেয়েশিশুটি মায়ের বুকে ঘুমিয়ে আছে।
রাহেলা বেগম এনটিভি অনলাইনকে জানান, ভাতগাঁও গ্রামের ধন মিয়ার ছেলে মহসিন মিয়ার সঙ্গে তিন বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। গত বছর মহসিন স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই আরেকটি বিয়ে করেন এবং মৌখিকভাবে তাঁকে তালাক দেন। মা-বাবাহীন রাহেলা দুই বছরের মেয়েশিশুকে নিয়ে নিজের বাড়ি চলে যান এবং অন্যের বাড়িতে কাজ করে খেতেন।
কিছুদিন আগে রাহেলা স্বামীর বাড়ি গিয়ে সন্তানের ভরণ-পোষণ দাবি করেন। ভরণ-পোষণ না দিলে তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান।
এর পরই গত শুক্রবার সকালে নিজের বাড়ি থেকে রাহেলাকে ধরে নিয়ে যায় স্বামীর বাড়ির লোকজন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাহেলা বলেন, ‘আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বাড়িতে বেঁধে রাখে। পরে আমার স্বামী মহসিন, ভাসুর কুদ্দুছ মিয়া, কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে কয়েছ মিয়া ও মহসিন মিয়ার খালাতো ভাই লুৎফুর মিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাঠি ও রড় দিয়ে পেটায়।’
‘এ সময় তারা আমার ক্ষতস্থানে মরিচের গুঁড়া দেয়। আমি পানি খেতে চাইলে আমার মুখে এনে প্রস্রাব ঢেলে দেয়।’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন রাহেলা। তিনি আরো জানান, বিকেলে গিয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হেলাল উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে জানান, শুক্রবার বিকেলে রাহেলা খাতুনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর শরীরের প্রায় সব জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কোমরে আঘাত পাওয়ায় এখনো তিনি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না এবং স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছেন না।
শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিন্নাতুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, খবর পেয়ে মহসিন মিয়ার বাড়ি থেকে রাহেলাকে হাত-পা বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁকে থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে বিকেলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এসআই আরো জানান, এ ঘটনায় রাহেলা বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন মহসিন, কুদ্দুছ মিয়া, কয়েছ মিয়া ও লুৎফুর মিয়া। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁরা পালিয়ে যান। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।
শাল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি পি সি দাস জানান, ‘রাহেলা লজ্জায় তাঁর ওপর যে নির্মম অত্যাচার হয়েছে তা বলতেও পারছেন না। তাঁর সারা শরীরে জখমের চিহ্ন রয়েছে। উপজেলায় এর আগে এ ধরনের নির্মম অত্যাচার হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’
রাহেলার এক প্রতিবেশী জানান, সকালে মানুষের চিৎকার শুনে তিনি মহসিনের বাড়ি যান। দেশি নানা অস্ত্র দিয়ে তাঁকে আঘাত করা হয়। রাহেলা নিজেই তাঁর পা, উরু ও কোমরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখান।
হাসপাতালে কয়েকজন রোগীর স্বজনও জানান, রাহেলা যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন তিনি ছিলেন রক্তাক্ত ও কাহিল।