গাজীপুর সিটির নির্বাচন স্থগিত নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ইসি সচিব!
হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসঙ্গত নোটিশ এবং শুনানির সুযোগ না দিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা কেন দিলেন ‘মাননীয় হাইকোর্টের কাছে সেটা আমারও প্রশ্ন’ বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হেলালুদ্দীন আহমদ মুঠোফোনে এনটিভি অনলাইনের কাছে এই মন্তব্য করেন।
হেলালুদ্দীন আহমদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসঙ্গত নোটিশ এবং শুনানির সুযোগ প্রদান না করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেন স্থগিতের ঘোষণা দিলেন তা আমি জানি না। হাইকোর্ট আমাদেরকে না জানিয়ে এই নির্দেশনা দিতে পারেন কিনা সেটা আমার প্রশ্ন।’
ইসি সচিব সংবিধানের ১২৫ এর ‘গ’ ধারাটি কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এই ধারার সঙ্গে আদালতের স্থগিতাদেশের মিল নেই।’
সংবিধানের ১২৫ (গ) ধারায় বলা হয়, ‘কোন আদালত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হইয়াছে এইরূপ কোন নির্বাচনের বিষয়ে, নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসংগত নোটিশ ও শুনানির সুযোগ প্রদান না করিয়া, অন্তর্বর্তী বা অন্য কোনরূপে কোন আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করিবেন না।’
এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘টিভির স্ক্রলে দেখার আগ পর্যন্ত আমিও জানতাম না রিটের বিষয়ে। লিখিত কোনো নোটিশ এখনো পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে হাইকোর্ট পাঠিয়েছেন কি না সেটাও আমি জানি না।’
এর আগে আজ বিকেলে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সর্ব প্রথম টিভি স্ক্রলে দেখে রিটের বিষয়টি নিশ্চিত হই।’ তবে তিনি তখন হাইকোর্টের নির্দেশের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এরপরে সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কবিতা খানম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা তো সত্য আমরা হাইকোর্ট থেকে কোনো যুক্তিসঙ্গত নোটিশ পাইনি। একই সাথে যুক্তিসঙ্গত শুনানির সুযোগও পাইনি।’
নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, এর আগে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে হাইকোর্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে একটি গাইড লাইন দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বলেছিলেন। তারপরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সেটা নিষ্পত্তি করে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য আহ্বান জানান। এরপরে আমরা দুই দুই বার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেই সীমানা নিয়ে। তারপরে আমরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আরেক নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনও কিন্তু একইভাবে হাইকোর্ট স্থগিত ঘোষণা করেছিল। হয়তো জনস্বার্থে করেছিলেন। তবে হাইকোর্ট কি পারে, না পারে তা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। হাইকোর্টের নির্দেশ প্রতিপালন করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’
এর আগে গতকাল রোববার সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে ঢাকার সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুলও জারি করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ। ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত। এখানে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। গত ৪ মার্চ সিটি করপোরেশনের সীমানা নিয়ে গেজেট জারি হয়। যেখানে শিমুলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়বাড়ী, ডোমনা, শিবরামপুর, পশ্চিম পানিশাইল, পানিশাইল ও ডোমনাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
রিটের পক্ষে আইনজীবী জানান, ২০১৩ সালে এ ছয়টি মৌজাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে এ বি এম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ আবেদন করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রাহ্য না করায় হাইকোর্টে রিট করার পর আদালত আবেদনটি পুনর্বিবেচনা করতে নির্দেশ দেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে এ ছয়টি মৌজা শিমুলিয়ার মধ্যেই ছিল। নির্বাচনে আজাহারুল ইসলাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এখন আবার এ ছয় মৌজাকে সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেহেতু তিনি ছয়টি মৌজার ভোটেও নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাই এ ছয়টি মৌজাকে সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত ওই আদেশ দেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন ১৫ মে হওয়ার কথা ছিল।