কচুরিপানাজটে নৌ যোগাযোগ ব্যাহত, বাণিজ্যে স্থবিরতা
কালী নদীতে জমাটবাঁধা কচুরিপানার কারণে কিশোরগঞ্জের ভৈরব-কুলিয়ারচরসহ ইটনা, মিঠামইন, নিকলী, অষ্টগ্রাম ও বাজিতপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে কুলিয়ারচরের নৌ যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ওইসব অঞ্চলের মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াতসহ ব্যবসা-বাণিজ্য, ফসলি জমি ও সাধারণ জেলেদের মাছ শিকারে চরম প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী, জেলে, কৃষকসহ খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছেন আর্থিক অনটনে। তাই নদীর কচুরিপানা অপসারণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে এলাকায় চলছে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ।
স্থানীয় লোকজন জানান, ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলার মাঝখান দিয়ে প্রবাহমান কালী নদীতে বাঁশ, ডালপালা ও কচুরিপানার ঘের দিয়ে মাছের আবাসভূমি সৃষ্টি করে এক শ্রেণির লোক মাছ শিকার করেন। জুন-জুলাই থেকে ডিসেম্বর-জানুয়ারি এই সাত-আট মাস ওই পদ্ধতিতে নদীতে মাছ আটকে রেখে তারা শিকার করে থাকেন। ঘেরের মাছ শিকারের পর কচুরিপানাগুলো তারা নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেন।
ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ের ভেতর নদীতে ভাসমান ওই কচুরিপানাগুলো থেকে নতুন কচুরিপানা তৈরি হয়ে পুরো নদী ভরে যায়। জমাটবাঁধা কচুরিপানার কারণে পুরো নদী আবদ্ধ হয়ে পড়ে। তখন সারা নদীতে ভাসমান জমাটবাঁধা কচুরিপানার জ্যাম ভেঙে নৌযান চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে কুলিয়ারচরের সঙ্গে আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলার নৌ যোগাযোগ ব্যাহতসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে আসে স্থবিরতা।
কুলিয়ারচর বাজারের ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া, মুছা মিয়া, রফিকুল ইসলাম ও আফিল উদ্দিন জানান, নদীবন্দর এলাকা হিসেবে বর্ষায় যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যে চাঞ্চল্য ফিরে আসার কথা, সেখানে নেমে আসে স্থবিরতা। এ সময় নদীর এই কচুরিপানার জঞ্জালের জন্য হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্যবাহী নৌযান কুলিয়ারচরে আসা-যাওয়া না করতে পরায় ব্যবসা-বণ্যিজ্যে ধস নেমে আসে। তাঁরা এই অবস্থা থেকে দ্রুত মুক্তি চান সরকারের কাছে।
কালী নদী থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করার দাবিতে সম্প্রতি কুলিয়ারচর লঞ্চঘাটে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের বিক্ষোভ। ছবি : এনটিভি
এদিকে নিকলীর ছাতিরচর এলাকার মাঝি হরমুজ আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজাপুরের ফুলমিয়া, অষ্টগ্রামের সারোয়ার হোসেন জানান, তাঁদের নিজ নিজ এলাকা থেকে কুলিয়ারচর আসার পথে কালী নদীর চার-পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে এখন তাদের তিন থেকে চার দিন সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে নদীতে কাটানো এই সময়টুকু তারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে কাটান। জ্বালানিসহ সব খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু পার্টির (ব্যবসায়ী) কাছ থেকে অতিরিক্ত সেই টাকা আদায় করতে পারেন না। এতে লোকসানে পড়ে আর্থিক অনটনে দিন কাটান।
অপরদিকে প্রান্তিক ও দরিদ্র জেলে হরেকৃঞ্চ দাস, রবি শংকর বর্মণ ও নীলেশ দাস জানান, এ সময় তাঁরা নদীতে মাছ শিকার করতে না পারায় চরম অসুবিধায় পড়েন। আয় না করতে পাড়ায় পরিবারের লোকজনদের নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনযাপনে বাধ্য হন।
অন্যদিকে এলাকার কৃষক এখলাছ উদ্দিন, ফরিদ মিয়া ও রিপন খান জানান, নদীর তীরবর্তী নিচুজমিতে রোপন করা বোরো ক্ষেত কচুরিপানায় ঢেকে যাওয়ায় পানিতে পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে তাদের মতো এলাকার শত শত কৃষক ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তারা ফসলহানির এই বিপর্যয় থেকে মুক্তি চান।
ভৈরব উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল বলেন, ‘আমাদের মাছও রক্ষা করতে হবে, ফসলও রক্ষা হবে। আবারও নৌ যাতায়াতও ঠিক রাখতে হবে। তাই সাদেকপুর ও গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এবং মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কালী নদীর কচুরিপানাগুলো রশি দিয়ে বেঁধে রেখে নৌ যোগাযোগ ও সাধারণ জেলেদের মাছ শিকারকে নির্বিঘ্ন করতে হবে।’ শিগগিরই এ ব্যাপারে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কাজী ফয়সাল জানান, মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই তিনি সরেজমিন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই সমস্যার দ্রুত সমাধানে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।