রেল দুর্ঘটনার শাস্তি কেবল তিরস্কার!

দেশের পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম জেলাতেই গত দেড় বছরে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৮ বার। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অধিকাংশ ঘটনার কারণ অনুসন্ধান এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতও করে। পরে সাজা হিসেবে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দায়ী ব্যক্তিদের কেবল তিরস্কার করা হয়! দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি যাই হোক, দায়ী ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কেবল তিরস্কৃত হয়েছেন।
গত বুধবার জাতীয় সংসদে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৪তম বৈঠকে এসব দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। জাতীয় সংসদ ভবনে আয়োজিত ওই বৈঠকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় সংগঠিত রেল দুর্ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্দিষ্ট ওই সময়ে চট্টগ্রাম জেলায় ৬৮ বার রেল দুর্ঘটনা ঘটে। ওই প্রতিবেদনে গত ১৯ জুন চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেকশনের গোদদণ্ডী ও ধলঘাট স্টেশনের মধ্যে সেতু নং ২৪ ভেঙে রেলওয়ের ইঞ্জিন ও ইঞ্জিনের সঙ্গে তিনটি তেলবোঝাই ট্যাংক ওয়াগন খালে পড়ে যায় এবং একটি তেলবোঝাই ট্যাংক ওয়াগন লাইনচ্যুত হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। তবে প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ গত দেড় বছরে ৬৮ বার ঘটা দুর্ঘটনার মধ্যে ৫৩টি ঘটনার নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তি মানে এসব ঘটনার তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
৫৩টি নিষ্পত্তি হওয়া ঘটনার মধ্যে ১৯ জনকে কেবল তিরস্কার করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে তিনজনকে, চাকরিচ্যুত করা হয়েছে দুজনকে এবং অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে দুজনকে। শাস্তি পাওয়া ব্যক্তিরা রেল চালনাসহ বিভিন্ন ইঞ্জিনসংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত।
দেশে একেক পর এক রেল দুর্ঘটনা ঘটে চললেও দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটি কারণ অনুসন্ধানের পর রেলচালক ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না রেল মন্ত্রণালয়। বরং ‘তিরস্কার’ করেই দায় সারছে রেল কর্তৃপক্ষ।
দুর্ঘটনার প্রতিবেদন সম্পর্কে কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বৈঠক শেষে ওই দিন ‘তিরস্কার’ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রেলের লোকবলের অভাব আছে। তাই কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিলে বা শোকজ করলে রেল চলাচলে ব্যাঘাত ঘটবে। তাই অনেক ক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তিদের তিরস্কার করা হয়।’
বৈঠকে রেললাইনের দ্রুত সম্প্রসারণসহ শূন্য পদে জনবল নিয়োগে যে সকল আইনগত ও মামলাজনিত জটিলতা রয়েছে তা নিরসন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করে কমিটি।
বৈঠকে কমিটি সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মো. আলী আজগর, মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মোহাম্মদ নোমান ও ইয়াসিন আলী অংশ নেন। এ ছাড়া বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব, মহাপরিচালক এবং মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।