শক্তি থাকলে সামনে আসুক, বলার পর চেয়ার ছোড়াছুড়ি-মারপিট
সাতক্ষীরা জেলা ও পৌর যুবলীগের দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভা। এ সময় মঞ্চ ও অনুষ্ঠানস্থলের চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।
আজ সোমবার বিকেল ৫টায় শহরের শহীদ আলাউদ্দিন চত্বরে পৌর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা চলাকালে এই ঘটনা ঘটে। হামলার পর শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট।
হামলায় জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি মীর শাহিন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাদিকুর রহমান, পৌর যুবলীগের সদস্য মাহি আলমসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. হারুনার রশীদ জানান, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিকেলে কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সায়ীদের সভাপতিত্বে সভায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এ সময় জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল মান্নান বক্তৃতা দিতে মঞ্চে উঠলে পৌর যুবলীগের সভাপতি জহুরুল ইসলাম নান্টু বলেন, তাঁকেও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এ সময় বক্তৃতারত মান্নান উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘যুবলীগ তাঁর নেতৃত্বেই থাকবে। শক্তি থাকলে সামনে আসুক তারা।’ এরপরই মঞ্চে চেয়ার ছুড়াছুড়ি শুরু হয়ে যায়। এ সময় মান্নানের সশস্ত্র বাহিনী এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে। তাদের হাতে ছিল রাম দা, চায়নিজ কুড়াল, হকিস্টিক, লোহার রড ও চেইন। তাদের হামলায় যুবলীগের মাহি আলম, জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি মীর শাহিন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাদিকুল হক, আসাদ ও তৌফিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। তাদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলায় আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ছবি : এনটিভি
এদিকে হামলার পর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মান্নানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সদর থানা ঘেরাও করে পৌর যুবলীগ। এতে নেতৃত্ব দেন পৌর যুবলীগের সদস্য ও সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির ছোট ভাই মাহি আলম।
জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল মান্নান দাবি করেছেন, তিনি বক্তব্য দিতে উঠলে তাঁর ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা করে যুবলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপ। এতে যুবলীগ নেতা মনোয়ার হোসেন অনু, ইয়ারুল ইসলাম, মিলন, তুহিনসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির সমর্থক ও আত্মীয় স্বজনরাই এই হামলার জন্য দায়ী।
এদিকে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনে। এ সময় পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে।
যুবলীগ নেতা মাহি আলম জানান, সম্প্রতি জহুরুল ইসলাম নান্টুর নেতৃত্বে পৌর যুবলীগের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটি জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল মান্নানের বহিষ্কার দাবি করে সম্প্রতি একটি মানববন্ধন করে। আজ সোমবার মান্নান জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁর সমর্থক ক্যাডারদের আলোচনা সভায় জড়ো করেন। তাঁদের হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র। আলোচনা চলাকালে সুযোগ বুঝে মান্নানের উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার পর তারা হামলা করে। এতে পুরো অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বারবার ফোন করা হলেও তিনি পরে জানাবেন বলে জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ বলেন, হামলার সময় মঞ্চে এমপি রবিসহ তাঁরা ছিলেন। তবে তাঁরা সুস্থ রয়েছেন।
হামলার সময় মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, এসএম শওকত হোসেন ও শেখ শাহজাহান আলী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, শেখ নুরুল হক, মো. শাহাদাত হোসেন, মো. হারুনার রশীদ প্রমুখ।