ছাত্রলীগের সভাপতির পদ নিশ্চিত করতে শাওনকে হত্যা!
গুলিবিদ্ধ হয়ে হত্যার শিকার আশফাক আল রাফি শাওন ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। আর সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন সঞ্জয় দত্ত। দুজনই নতুন কমিটির সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। সভাপতির পদ নিশ্চিত করতেই সঞ্জয় দত্ত ও তাঁর অনুসারীরা শাওনকে গুলি করে হত্যা করেছে।
এই অভিযোগ করে শাওনের মৃত্যুর ১৩ দিন পর আজ বুধবার ময়মনসিংহের এক নম্বর আমলী আদালত ও জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মাসুদুল হকের আদালতে হত্যা মামলার আর্জি জমা দিয়েছেন শাওনের বাবা এম এ কুদ্দুস। এর আগেই ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ শাওন হত্যার ঘটনায় মামলা করায় তবে আদালত ওই মামলার তদন্তের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এম এ কুদ্দুসের করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেন।
এম এ কুদ্দুসের মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় দত্ত (২৬), তাঁর অনুসারী এস এম আরিফুল হক (২৭), আমিনুল ইসলাম হিমেল (২৭) ও দ্বীপ্ত দত্ত (২৩)। পুলিশের করা মামলায় সঞ্জয়, আরিফ ও হিমেলের নাম থাকলেও এই মামলায় নতুন করে যোগ হলো দ্বীপ্ত দত্তের নাম ।
খবরটি নিশ্চিত করেছেন মামলার আইনজীবী পীযুষ কান্তি সরকার।
আসামিদের মধ্যে দ্বীপ্ত দত্ত ছাড়া বাকি তিনজন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বর্তমানে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ হেফাজতে আছেন।
শাওনের বাবা এম এ কুদ্দুস ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি আজ আদালত প্রাঙ্গণে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি শুধু আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি দাবি জানাব, আমার সন্তানের, একমাত্র পুত্র সন্তানের হত্যা, গুলি করে হত্যা করেছে তার বিচার চাই। এর বাইরে আমার কোনো কিছু নাই। আমি আমার একমাত্র পুত্র হত্যার বিচার চাই। আপনারা সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, আমি মানুষের সাথে দীর্ঘদিন রাজপথে কাজ করেছি। কোনোদিন আমি কারো কোনো ক্ষতি করি নাই। আমার চরম যে ক্ষতি যারা করেছে তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, এটাই আমি দাবি জানাব। আমি এর বেশি কিছু কথা বলতে পারছি না। সন্তানের জন্য আমি শয্যাশায়ী ছিলাম। এই অবস্থায় আমি মামলা করতে পারি নাই। তার জন্য আমার বিলম্ব হয়েছে। অনেকের সাথে পরামর্শ করে আলোচনা করে মূল রহস্য উদঘাটন করে যাদেরকে আমার মামলা করতে হবে তাদের তথ্য নিয়ে মামলাটি দায়ের করার জন্য আমার দেরি হয়েছে।’
নিহত ছাত্রলীগ নেতা আশফাক আল রাফি শাওনের বাবা এম এ কুদ্দুস। ছবি : এনটিভি
আরো তিনজন গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে : শাওন হত্যার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এঁরা হলেন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছাত্রাবাস শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম (২৬), ছাত্রলীগ কর্মী নাহিদ (২৬) ও জুয়েল বাঁশফোর (২৫)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) পলাশ কুমার রায় আজ বুধবার তিনজনকে ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলী আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। বিচারক মাসুদুল হক দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরের জেলা পরিষদ অফিসের সামনে শাওন গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে পরের দিন তাঁকে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ৮ মার্চ দুপুরে ওই হাসপাতালেই মারা যান শাওন।
পরে শাওনের বাবা এম এ কুদ্দুস জেলা প্রশাসনের কাছে মামলা করবেন না বলে অনুমতি নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করেন।
শাওন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় দত্ত, ছাত্রলীগকর্মী পিচ্চি আরিফ ও হিমেলকে আটক করেছিল পুলিশ। কিন্তু তখন শাওনের পরিবারের অভিযোগ না থাকায় ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতে চালান করা হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হন তাঁরা।
১৫ মার্চ নিয়মিত হাজিরা দিতে এলে আদালত চত্বর থেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সঞ্জয় দত্ত, ছাত্রলীগকর্মী পিচ্চি আরিফ ও হিমেলকে আটক করে পুলিশ। এরপর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মুস্তাফিজুর রহমান শাওন হত্যার ঘটনায় বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখান।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই পলাশ ওই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। ১৮ মার্চ শুনানির পর আদালত তাঁদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই দিন রাত থেকে ওই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আদালতের নির্দেশে গত ১৯ মার্চ দুপুরে শাওনের গ্রামের বাড়ি ফুলবাড়িয়া উপজেলার লক্ষীপুর গ্রাম থেকে শাওনের লাশ উত্তোলন করা হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশে মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে।