ভাগ্নে ও বন্ধুদের খুঁজছে পুলিশ
রাজধানীর উত্তর কালাচাঁদপুরে খুন হওয়া সুজাত ও তাঁর মায়ের বাসায় তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে আসে সুজাতের বড় বোনের ছেলে সঞ্জিত চিরান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা ওই বাসায় খাওয়া দাওয়া শেষে বিশ্রাম নেয়। অবস্থান করে রাত পর্যন্ত।কিন্তু সুজাত চিরান ও তাঁর মা বেসেথ চিরান খুন হওয়ার পর সঞ্জিত আর তাঁর বন্ধুদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁদের ফোন নম্বরটিও বন্ধ পেয়েছেন স্বজনরা।
এ কারণে সন্দেহের তীর সরাসরি বিঁধছে সঞ্জিত চিরানের দিকে। নিহত সুজাতের স্বামী আশিষ মানখিন রাজধানীর গুলশান থানায় যে মামলা করেছেন, তাতেও প্রধান আসামি করা হয়েছে ভাগ্নে সঞ্জিত চিরানকে। অজ্ঞাত হিসেবে আসামির তালিকায় আছেন সঞ্জিতের তিন বন্ধু।
রাজধানীর গুলশানের উত্তর কালাচাঁদপুর এলাকার ‘ক-২৫’ নম্বর বাড়ির ৫তলা ভবনের ৪ তলার দুই রুমের ফ্ল্যাট থেকে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে গারো নৃ গোষ্ঠীর মা-মেয়ে বেসেথ চিরান (৬৫) ও সুজাত চিরানের (৪২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বেসেথ চিরানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর খাটের নীচে ঢুকিয়ে রাখা হয়। আর সুজাত চিরানকে ফেলে রাখা হয় মেঝেতে।
সুজাতের স্বামী আশিষ মানখিন এনটিভি অনলাইনকে জানান, ভাগ্নে সঞ্জিত চিরান অনেকটা ভবঘুরে টাইপের বেকার যুবক। তবে বিয়ে করেছে, সন্তানও আছে। তার বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ির মরিয়মপুরে। সেখান থেকে সে মাঝে মধ্যেই কালাচাঁদপুরের ওই বাসায় আসতো। কিন্তু এভাবে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এটাই প্রথম আসা। ঘটনার সময় আশিষ বাসায় ছিলেন না। তবে বন্ধুদের নিয়ে আশিষ দুপুরে বাসায় এসেছেন এ খবরটা তিনি জানতেন।
এই খুনের সঙ্গে কোনো আর্থিক লেনদেন কিংবা পূর্ব শত্রুতার জের আছে কিনা জানতে চাইলে আশিষ মানখিন জানান, ওই রকম কিছু আছে বলে মনে পড়ছে না। তবে ছেলেটি বখাটে টাইপের।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, খুনের বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে পারিবারিক শত্রুতা কিংবা প্রেমঘটিত বিষয়ও হতে পারে। নিহতের সুজাতের স্বামী মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
‘শ্বাসরোধ ও কুপিয়ে হত্যা’
এদিকে আজ বুধবার দুপুরে বেসেথ চিরান ও সুজাত চিরানের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ বিশ্বাস জানান, বেসেথ চিরানকে শ্বাসরোধে ও তাঁর মেয়ে সুজাত চিরানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সুজাতের বুকে, পিঠে ও হাতে প্রায় ১৪টি কাটা জখম পাওয়া গেছে। গলায় রয়েছে গভীর ক্ষতের চিহ্ন।
প্রদীপ আরও জানান, নিহতদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা জানতে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
নিহতদের লাশ সমাহিত করার জন্য গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের জয়রামপুরা ইউনিয়নের চন্দ্রাঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বেসেথ চিরানের স্বামী আনেক আগেই মারা গেছেন। ৬৫ বছরের বৃদ্ধা বেসেথ বাসায়ই থাকতেন। আর মেয়ে সুজাত ওই এলাকার বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন।