কারাগারেই কাটল ২০ বছর, জামিন মিলল নারী দিবসে
২০ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে এক শিশুকে অপহরণের অভিযোগে আটক হন মনোয়ারা বেগম। ওই মামলায় ২০০১ সালে কক্সবাজারের বিচারিক আদালত মনোয়ারাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার মতো সামর্থ্য ছিল না মনোয়ারার। তাই ১৯৯৮ সাল থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মনোয়ারা বেগমকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনকারীর আইনজীবী ছিলেন ফজলুর রহমান। আর আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. শফিউল্লাহ।
জানা যায়, সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়ে মনোয়ারা সম্পর্কে জানতে পারেন ফজলুর রহমান। দরিদ্র হওয়ার কারণে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি মনোয়ারা। গত রোববার তাঁর পক্ষে ওই আবেদন করেন ফজলুর রহমান।
১৯৯৮ সালে মনোয়ারার বয়স ছিল ২৫ বছর। এখন তাঁর বয়স ৪৫ বছর। তিনি এখনো কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন।
আদালতে আইনজীবী শফিউল্লাহ বলেন, ‘মনোয়ারা বেগম দরিদ্র, গরিব। তাঁর উকিল নিয়োগের সামর্থ্য নেই।
আদালত বলেন, ‘বয়স কত?’
জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘তখন ২৫ বছর ছিল। এখন ৪৫ হয়েছে।’
আদালত বলেন, ‘বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন আছে? জামিন দিলে কই যাবে? সে কি বিবাহিত?’
আইনজীবী বলেন, ‘ঘরবাড়ি আছে। গরিব ও দরিদ্র তো। তাই হয়তো যোগাযোগ নেই।’
পরে আদালত বলেন, ‘আজ তো নারী দিবস। কিন্তু তাঁর দীর্ঘ কারাবাস বিবেচনায় তাঁকে জামিন দিলাম। আর জামিনে মুক্তির পর মনোয়ারা যদি মনে করে তাঁর সামাজিক পুনর্বাসন দরকার তাহলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অফিসার তাঁকে পুনর্বাসন করবেন।’
মনোয়ারা জামিনে বের হয়ে যদি তাঁর আত্মীয়স্বজনকে না পান, তাহলে তাঁকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এবং সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশও দিলেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, ‘এ রকম যারা দীর্ঘ কারাবাসে আছে তাদের মুক্তির পর যদি সামাজিক পুনর্বাসন দরকার হয় তাহলে সরকার সেটা করবেন বলে পর্যবেক্ষণ দিচ্ছি।’
মামলার বিবরণে জানা যায়, মনোয়ারা কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্ব ধেচুয়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁর স্বামীর নাম ইসমাইল। মামলার বিবরণে তাঁর নাম মনোয়ারা বেগম ওরফে মোতাহেরা বেগম ওরফে খুরশীদা বেগম।
মামলার বিবরণে আছে, ১৯৯৮ সালের ১৩ জুন কক্সবাজারের সদর উপজেলার ঝিলাংজা এলাকায় যান মনোয়ারা। সেখানে এক বাড়িতে গিয়ে মনোয়ারা বলেন, ‘আমি আত্মীয়র বাড়ি খুঁজতে আসছি। কিন্তু পাইনি। যদি রাত থাকতে দেন তাহলে ভালো হয়।’ এরপর ওই বাসায় থাকেন তিনি।
পরের দিন সকালে ওই আশ্রয়দাতা তাঁর আট বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে স্কুলের দিকে রওনা দেন। ওইদিন সকালে মনোয়ারাও বিদায় নিয়ে বের হন। কিন্তু দুপুরের পর থেকে ওই শিশুকে আর পাওয়া যায়নি। পরে ওই আশ্রয়দাতা জানতে পারেন শিশুটিকে পাচারের উদ্দেশে অপহরণ করেছেন মনোয়ারা।
১৭ জুন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর গোড়ায় ওই শিশুসহ মনোয়ারাকে আটক করে পুলিশ। পরে ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০০১ সালের ২৭ নভেম্বর কক্সবাজারের বিচারিক আদালত ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইনের ১২ ধারায় মনোয়ারাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।