হাইকোটের কার্যতালিকায় খালেদা জিয়ার আপিল, কাল শুনানি

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল গ্রহণের ওপর শুনানির জন্য হাইকোটের কার্যতালিকায় আনা হয়েছে। আপিল শুনানির পাশাপাশি একইসঙ্গে আগামীকাল খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনও করা হবে একই বেঞ্চে।
হাইকোর্টের কার্যতালিকায় দেখা যায়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য মামলাটি ছয় নম্বরে রাখা হয়েছে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন খালদা জিয়ার আইনজীবীরা।
এরপর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি (মেনশন স্লিপ) উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। পরে আদালত আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।
শুরুতে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতকে জানান, খালেদা জিয়ার পক্ষে আপিল করা হয়েছে।
এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ বলেন, ‘জামিনের দরখাস্ত থাকলে আমাদের (রাষ্ট্রপক্ষ) যেন কপি দেওয়া হয়।’
তখন আদালত বলেন, তাঁরা (বিএনপির আইনজীবীরা) তো মেনশন স্লিপ দিচ্ছেন। জামিনের দরখাস্ত থাকলে আগে দিয়ে দেবেন (বিএনপির আইনজীবীদের উদ্দেশে)।’
খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সেই সময় বলেন, ‘কাল (বুধবার) বন্ধ। বৃহস্পতিবার সকালে আবেদনের কপি দেওয়া হবে।’
একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপক্ষকে আবেদনের কপি দেওয়ার কথা বলেন এবং রোববার শুনানির জন্য দিন রাখা যেতে পারে বলে মতামত দেন।
ওই সময় আদালত বিএনপির আইনজীবীদের আজকের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে কপি দিয়ে দিতে বলেন। বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করে আদালত বলেন, ‘দুদকের মামলা সাধারণত বুধবার ও বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য আসে। এটি বৃহস্পতিবার তালিকায় আসবে।’
এর আগে আজই সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সিনিয়র আইনজীবীরা। এতে অংশ নেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, আবদুর রেজাক খান, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, সানাউল্লাহ মিয়া, আমিনুল ইসলাম ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
গত সোমবার খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দীন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এঁদের মধ্যে তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।