শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করতে এসে নিজেরাই ঝরে পড়ছেন!
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহ্যাসমেন্ট প্রজেক্ট-সেকায়েপ’ এর শিক্ষকরা। প্রত্যন্ত এলাকায় মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন করতে এসে নিজেরাই এখন মুখোমুখি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও মেয়াদ বাড়ানো বা স্থায়ীকরণের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর হতাশাগ্রস্ত এ শিক্ষকরা দাবি করেছেন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোসহ এমপিওভুক্ত করার।
গত ডিসেম্বর মাস থেকে বন্ধ হয়ে আছে মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রকল্প সেকায়েপের অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকদের (এসিটি) বেতন-ভাতা। ফলে সারা দেশের মতো নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ৮৮ জন শিক্ষক ডিসেম্বর মাস থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আত্রাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে শুরু হয় সেকায়েপের কার্যক্রম। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়ন করে ওই প্রকল্পে। ২০১৫ সালে তিন বছর মেয়াদে ৬৪টি জেলার একটি করে উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ে দুই হাজার ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষক (এসিটি) নিয়োগ দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে আসা এই শিক্ষকরাই এখন অস্তিত্ব সংকটে। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন। হতাশাগ্রস্ত এসব শিক্ষক তাদের এমপিওভুক্তির জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। এরই মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
এদিকে গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আজও তাঁরা নিয়োগকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলার ভবানীপুর জি এস উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত সেকায়েপের শিক্ষক অসীম কুমার বলেন, ‘সরকার আমাদের চাকরির মেয়াদ না বাড়ালে পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষক বেকার হয়ে পড়বে। আবার অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যাদের সরকারি চাকরিতে আবেদন করার বয়স নেই। ফলে আমরা সেকায়েপ শিক্ষকরা এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে আছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলার গুরনয় সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জারজিজার রহমান বলেন, ‘সারা দেশের মতো আমাদের আত্রাই উপজেলায় সেকায়েপের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ফলে শিক্ষার মান আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার এ প্রকল্প চালু রাখলে শিক্ষার মান আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি।’
এ ব্যাপারে উপজেলার আহসানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সনৎ কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘সেকায়েপ প্রকল্প বর্তমান সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। আমার মাদ্রাসায় অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষক সেকায়েপ প্রকল্প থেকে দেওয়ার ফলে ক্লাসে পাঠদানের মান অত্যন্ত ভালো এবং প্রতিষ্ঠানের ফলাফল অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই সমস্যার সমাধান করুন। এতে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যও পূরণ হবে । এ ছাড়া দূর হবে শিক্ষকদের দৈন্যতাও।
আত্রাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তারিকুল আলম বলেন, ‘সেকায়েপ প্রকল্পের এসিটি শিক্ষকদের ব্যাপারে আমি মাঝে মধ্যেই প্রকল্প পরিচালকসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এ মেধাবী শিক্ষকদের দক্ষতা ও পাঠদানের কৌশল বিবেচনায় তাঁদের চাকরি স্থায়ীকরণ করলে, এ উপজেলার শিক্ষাব্যবস্থা অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
এদিকে উপজেলার অভিভাবকরা বলছেন, নওগাঁ জেলায় এমনিতেই শিক্ষক সংকট থাকায় সেকায়েপ প্রকল্প পুনরায় চালু না হলে শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মক হুমকিতে পড়বে। পাঠদান ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষক নেতারা।