‘দেন, কিছু টাকা-পয়সা দেন’
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ভোট গণনার কাজ।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শান্তিপূর্ণভাবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। নির্বাচন উপলক্ষে আদালতপাড়ায় সকাল থেকে উপস্থিত রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান সকাল থেকে আদালতপাড়ায় উপস্থিত হয়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেলের পক্ষে প্রচারণা চালান।
অন্যদিকে বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেলের পক্ষে প্রচারণা চালান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
বেলা আড়াইটার দিকে আদালতপাড়ায় তৈমূর আলমকে দেখে হাত বাড়ান শামীম ওসমান। তৈমূরও হাত বাড়িয়ে হাতে হাত মেলান।
এ সময় হাসতে হাসতে শামীম ওসমান তৈমূর আলম খন্দকারকে বলেন, ‘আপনারে তো দালাল দালাল কইতে কইতে শেষ কইরা লাইছে। এখন তো আপনি অ্যারেস্ট হইছেন। এখন তো আর কইব না।’
এরপর দুই নেতা কোলাকুলি করেন। তখন পাশ থেকে কেউ বলেন ওঠেন, ‘একটা তালি হবে, একটা তালি হবে।’
তৈমূর আলম খন্দকার সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে বলেন, ‘তুমি ভালো আছ?’
জবাবে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান হাত পেতে বলেন, ‘দেন, কিছু টাকা-পয়সা দেন।’
এ কথা শুনে হেসে ওঠেন দুই দলের নেতাকর্মীরা।
একজন তৈমূরের পাশ থেকে বলেন, গতবার ৫০০ টাকা দিছিলেন।
তৈমূর আলম খন্দকার পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে এক হাজার টাকার একটি নোট ধরিয়ে দেন শামীম ওসমানের হাতে। শামীম ওসমান টাকাটি পকেটে ঢুকিয়ে হাসতে হাসতে সামনে চলে যান।
তৈমূর আলম খন্দকারও হাসতে হাসতে অন্যদিকে চলে যান।
এর আগে গত বছরও জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আদালতপাড়ায় বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোলাকুলি করেছিলেন। তখন তিনি ‘মজা’ খাওয়ার কথা বলে টাকা চেয়েছিলেন তৈমূর আলম খন্দকারের কাছে। তখন তৈমূর ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন শামীম ওসমানকে।
গত ২৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুর ১টায় নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার বাইরে থেকে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তিনি বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেলের পক্ষে প্রচারণা করছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। ওই সময় পুলিশের লাঠি ও অস্ত্রের আঘাতে আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য আঞ্জুম আহমেদ রিফাত, নির্বাচনের প্রার্থী রেজাউল করিম খান রেজা, আজিজুর রহমা মোল্লা, শরীফুল ইসলাম শিপলুসহ কমপক্ষে ১০ আইনজীবী আহত হন।
গ্রেপ্তারের পর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের নামে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ওই ঘটনার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, পুলিশ অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের কলার চেপে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নেয়। নেতাকর্মীরা বাধা দিতে গেলে তাদেরও দূরে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
ওই ঘটনার দুদিন পর ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ কোট এবং হাইকোর্ট থেকে পৃথক দুটি মামলায় তৈমূর আলম খন্দকার জামিন পান। পরে সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। ওই গ্রেপ্তারের ঘটনা আজ তৈমূর আলম খন্দকারকে মনে করিয়ে দেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।