মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার দিকে যাচ্ছে সরকার
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে সরকার মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার দিকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দখল ও হরণের নীতি বাস্তবায়ন করতেই মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার নীলনকশা এঁটেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে মাইনাস করে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। আর বিএনপিকে মাইনাস করে এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
আজ সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি বসুন্ধরা সিটি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘নৌমন্ত্রী শাজাহান খান গতকাল বলেছেন, খালেদা জিয়ার সাজা নিশ্চিত এবং রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও গতকাল বলেছেন, জেলে গিয়েই বেগম খালেদা জিয়াকে আপিল করতে হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে একদিনের জন্য হলেও জেলে যেতে হবে। তাদের বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়-আদালতের রায় কি হবে তা তারা জানেন এবং আদালতকে প্রভাবিত করে খালেদা জিয়াকে সাজা দিতে চাচ্ছেন।’
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার আদালতকে হাতিয়ার বানাতেই প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বন্দুকের জোরে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন। বিচারালয়কে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অসৎ উদ্দশ্যে হাসিল করতেই সিনহাকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জাল নথির বানোয়াট মামলার কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা, দেশে এক আইন এক প্রভুর একদলীয় শাসনের ভারী পাথর জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন এদেশে আর করতে পারবে না সেটা জেনে নতুন ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছে সরকার। দেশে একদলীয় শাসন কায়েমের পথের কাঁটা হলেন বেগম খালেদা জিয়া, জিয়া পরিবার তথা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে পারলে শেখ হাসিনার পথের কাটাঁ দূর হয়ে যায়। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে হাজার হাজার মামলা এবং মামলাগুলোতে তাড়াহুড়া করে রায়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এগুলোর আসল উদ্দেশ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জনগণের বুঝতে বাকি নেই যে, এসব হচ্ছে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সরকারের নীলনক্শা।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের সময় ১/১১ সরকার ও দুদকের দায়ের করা ১৫টি মামলা উনার মাথার ওপর ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাত হাজারের অধিক মামলা সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অথচ বিএনপি চেয়ারপারসনসহ বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোকে সচল করতে যা যা প্রয়োজন শেখ হাসিনার সরকার সে ব্যবস্থাই নিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা অনেক মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত ছিল। কিন্তু সম্পূর্ণ প্রতিহিংসামূলকভাবে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলাগুলো সচল করে বিচার কাজ পরিচালনা করাচ্ছে। শুধু তাই নয় মিথ্যা, সাজানো ও হয়রানিমূলক নতুন নতুন মামলাও দেওয়া হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতে লাভ হবে না। সরকারের এহেন চক্রান্তে চারিদিকে ঘৃণার ধিক্কার উঠেছে। জনগণের বুঝতে বাকি নেই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দখল ও হরণের নীতি বাস্তবায়ন করতেই মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার নীলনকশা এঁটেছেন শেখ হাসিনা। তিনি ১/১১ এর শিক্ষা থেকে শিক্ষা নেননি। যদি নিতেন তাহলে তিনি রাজনীতির এই বিপজ্জনক খেলায় মেতে উঠতেন না।’
রিজভী বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, দুঃশাসনের কালোরাত শেষ হয়ে এসেছে। আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বেগম জিয়ার মামলা নিয়ে সরকার কোনো হীন পরিকল্পনা করে থাকলে শেখ হাসিনার সরকার নিজেদের পতন থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না। এদেশের মানুষ মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা বাস্তবায়নকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে অনড় প্রস্তুতি গ্রহণ করে আছে। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে মাইনাস করে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। আর বিএনপিকে মাইনাস করে এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’
গাজীপুরে লাঠিপেটার প্রতিবাদে নিন্দা
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকার বিরোধীদল দমনে পুলিশকে বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করছে। প্রতিদিন পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, নির্যাতন করছে, ক্রসফায়ারের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। বিরোধী দলের সমাবেশের ন্যূনতম অধিকারটুকুও হরণ করে নিচ্ছে। যশোরে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার মহোৎসব চলছে। তার ওপর বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের হিড়িক চলছে। গতকাল গাজীপুরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেধড়ক লাঠিচার্জ করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুলসহ অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাসহ অর্ধশতাধিক স্থানীয় নেতা-কর্মীকে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ সময় পুলিশ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নাজেহাল করে। আমি পুলিশের এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানচ্ছি। অবিলম্বে আটককৃত বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। আহত নেতাকর্মীদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’