জামাই মেলায় উঠল মাছ, দাম ৬৫ হাজার টাকা!

মেলায় পাওয়া যায় কেবল মাছ। যেখানে একটি মাছের দাম ৬৫ হাজার টাকা! কিন্তু কেবল জামাইরা এ মাছ কিনতে পারবেন! তবে যদি শ্বশুররা আসেন তাঁরাও কিনতে পারবেন। ওই মেলার নাম যে ‘জামাই মেলা’!
আজ রোববার গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে ওই মেলার আয়োজন করা হয়। দিনভর ছিল মাছ বিক্রেতা ও ক্রেতাদের ভিড়। ছিল মাছ দেখতে আসা মানুষেরও ভিড়। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ২৫০ বছর ধরে আয়োজিত হচ্ছে ‘জামাই মেলা’র।
এটি আসলে মাছের মেলা। এখানে চলে এলাকার জামাইদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। বিনিরাইল এবং এর আশপাশে গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, ওই জামাইরা হচ্ছে ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শণার্থী।
ওই মেলাকে ঘিরে এলাকার শ্বশুরদের মধ্যেও চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। আর তা হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুরবাড়ীতে নিয়ে যেতে পারে! আবার এটাও দেখা হয় কোন শ্বশুর সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে জামাই আপ্যায়ন করতে পারে! বিনিরাইলের মাছের মেলা যেন জামাই-শ্বশুরের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতার মাঠ।
মেলার মাঠে গিয়ে দেখা গেল একটা মাছকে ঘিরে জামাইদের জটলা লেগে আছে। এ মাছের নাম কাতল। বিক্রেতা দাম চাইলেন ৬৫ হাজার টাকা। নুরুল ইসলাম এর দাম বলেছেন ৪৫ হাজার টাকা। তিনি চুপাইর এলাকার জামাই। কিন্তু বিক্রেতা আরো বেশি দাম পাওয়ার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলছে দর কষাকষি।
এই দিনটিকে ঘিরেই এখানে দিনব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। এ দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই, এর বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলার সবচেয়ে বড় এই মাছের মেলায়। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।
এবারের মেলায় প্রায় তিন শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়েছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে। মাছের মেলায় সামদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কালি বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশি মাছও।
বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ছোট পরিসরে। অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো ওই মেলার। প্রায় ২৫০ বছর যাবৎ মেলাটি হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন শেখ জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। এলাকার জামাইরা বলেন, শ্বশুরবাড়ীতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা। তাই এলাকার সকল জামাইদের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই। তাই স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করেন। সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়।
বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় চুপাইর গ্রামের জামাই নুরুল ইসলাম জানান, এবার সাড়ে ১৫ হাজার টাকার চিতল, বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন শ্বশুরবাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সম্পর্কে জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফারুক মাস্টার বলেন, ‘মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যতই হউক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’