পবিত্র কোরআনের যে সুরা পড়ে বক্তব্য শেষ করেন খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, “আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি পবিত্র কোরআনের সুরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতটির বাংলা তরজমার কথা উল্লেখ করে। ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী তোমাদের চাইতে বেশি। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলো কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম সম্পর্কেই অবগত।’ মাননীয় আদালত আপনাকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।”
আজ মঙ্গলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনে সপ্তম দিনের মতো বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
পরে যুক্তিতর্কের জন্য আগামী ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। এর আগে প্রায় তিন ঘণ্টা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার সম্পর্কে পিডব্লিউ ১ হারুন অর রশীদ দাবি করেছেন, আমি সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলি এবং অপারেট করি। কিন্তু এ জাতীয় কোকো তথ্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হতে বা সোনালী ব্যাংকের রেকর্ডপত্র হতে উপস্থাপন করতে পারেননি। তার এ রূপ বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। পিডব্লিউ ১ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আমি সোনালী ব্যাংক রমনা শাখা হতে অ্যাকাউন্টের টাকা ট্রান্সফার করে সোনালী ব্যাংক গুলশান, নিউ নর্থ শাখায় স্থানান্তর করি। পিডব্লিউ ৩ সফিউদ্দিন মিঞা ও পিডব্লিউ ৫ হারুনুর রশিদ উভয়েই সোনালী ব্যাংক গুলশান নর্থ শাখার কর্মকর্তা হিসাবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের সাক্ষ্যে এই শাখায় ০৯-১০-১৯৯৩ এ এসটিডি হিসেবে নম্বর ৭-এর অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফরম এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট-এর ডিড অব ট্রাস্টের ফটোকপি, স্বাক্ষরকার্ড দাখিল করেছেন এবং প্রমাণ করেছেন। তাঁদের সাক্ষ্যে তাঁরা একথা বলেন নাই যে, আমি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্ট খুলি বা এ অ্যাকাউন্টগুলোর সিগনেচার কার্ডে আমার স্বাক্ষর ছিল বা আমি অপারেট করি।’
‘মাননীয় আদালত, আমার বিরুদ্ধে উপস্থাপিত এইরূপ সাক্ষ্য থেকে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, আমি বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আনার বিষয়ে কিংবা সোনালী ব্যাংক রমনা করপোরেট শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে বা এই অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার করে সোনালী ব্যাংক, গুলশান নিউ নর্থ শাখায় স্থানান্তরের সঙ্গে মোটেই সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে কোনো পর্যায়েই অ্যাকাউন্টটির খোলা অথবা অপারেট করার কোনো সাক্ষ্য নেই।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘মাননীয় আদালত, এ জাতীয় সাক্ষ্যের দ্বারা ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্টের অথবা ইনট্রাস্টমেন্টের দায়বদ্ধতা আমার ওপরে বর্তায় না।’
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল।
এর আগে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে সময়মতো আদালতে হাজির না হওয়ায় গত ৩০ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালত। একই সঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ বাতিল করে ৫, ৬ ও ৭ ডিসেম্বর যুক্তিতর্কের জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, ৩০ নভেম্বর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম দলগুলোর ডাকা হরতালে নিরাপত্তার কারণে খালেদা জিয়া সময় অনুযায়ী আদালতে হাজির হতে পারেননি। তাই আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকাবস্থায় একই আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। দেশে ফিরেই তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। এর পর থেকে প্রতি সপ্তাহেই তিনি আদালতে হাজিরা দিয়ে আসছিলেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি। জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর-রশিদ।
এ মামলার অপর আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।