বঙ্গোপসাগরের ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে’ গবেষণা শুরু
বঙ্গোপসাগরের মৎস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে’র নীল জলরাশিতে পাঁচ দিনের গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে। আজ রোববার থেকে শুরু হওয়া এ গবেষণা আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হবে।
আজ রোববার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা মেরিন ফিসারিজ ঘাটে বঙ্গোপসাগরে যাত্রার শুরুতে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার। গবেষক দলের প্রধান ড.আনিসুজ্জামান, নৌ বাহিনী, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ইসাবেলা ফাউন্ডেশন ৪০ জন গবেষক নীল জলরাশিতে পাঁচদিন গবেষণকাজ করবে। প্রথমবারের মতো এ গবেষণাকাজে যুক্ত করা হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির জরিপ জাহাজ। সোয়াচের নীল জলের উপরিভাগসহ পানির নিচেও গবেষণা ও তথ্য চিত্রের জন্য তিনজন প্রশিক্ষিত স্কুবা ড্রাইভার ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১২ বিভাগের ৪০ জন সদস্য কাজ করবেন।
কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘সমুদ্রে গবেষণাকাজের সূচনা হয়েছে। এ গবেষণায় মৎস্য বিচরণের স্রোতগুলো চিহ্নিত,তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজ মাঠপর্যায়ে চলেছে। আমরা প্রথম বারের মতো পরিকল্পিতভাবে ৪০ জন বিভিন্ন বিষয়ের গবেষক নিয়ে কাজ শুরু করছি। আমরা চেষ্টা করছি সমুদ্রের অজানা রহস্য বের করতে। সমুদ্রের তলদেশে কী আছে আমরা জানি না। তবে কিছু কিছু অনুমান করি মাত্র।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, সমুদ্রের তলদেশে গ্যাস ও তেলের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। সরকার গ্যাস-তেল অনুসন্ধানের জন্য একটি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেটি দিয়ে তেল-গ্যাস অনুসন্দান করা হবে। যদিও সে বিষয়টি আমাদের গবেষণাকাজে ও পরিধির মধ্যে নেই।’
কবির বিন আনোয়ার আরো বলেন, ‘এ গবেষণাকাজে সাগরের জীববৈচিত্র্য, সমুদ্রের পানিতে মিশে থাকা প্লানটাস ও তাঁর মাত্রা নিরুপন,পানির গুণাগুণ, স্রোত কোনদিক থেকে কোন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে, মাছের প্রজননকেন্দ্র কোথায় তা চিহ্নিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।’
ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের প্রধান পরামর্শক ড. আনিসুজ্জামান জানান, বঙ্গোপসাগর এক লাখ ৭৩ হাজার ৮০০ হেক্টর এলাকা নিয়ে গঠিত। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড বিশ্বের ১১টি গভীরতম ক্যানিয়নের মধ্যে অন্যতম। যা এক লাখ ২৫ হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছিল।
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে এ অঞ্চলটি মৎস্যভাণ্ডার। এর পাশাপাশি বিশাল আকারের তিমি, ডলফিন, হাঙর, কচ্ছপ ও বিরল জীববৈচিত্র্যের নিরাপদ প্রজননকেন্দ্র। যেটি প্রস্তাবিত ব্লু ইকোনমির জন্য বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড ১৯১৪ সালে প্রথম মেরিন প্রটেক্টেড অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত মার্চে একটি অল্প সময়ের অনুসন্ধানে এমন কিছু প্রাণীর দেখা মিলেছে যেসব প্রাণী বিশ্বে বিলুপ্তির তালিকায়।’
এ গবেষণাকাজে অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মৎস্য গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের বিশাল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।উম্মুক্ত হয়েছে সম্ভাবনার দ্বার। যেটাকে ব্লু ইকোনমি বলা হয়। এখানে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কী কী সামুদ্রিক সম্পদ রয়েছে তা দেখার চেষ্টা করব।