পেটে গজ রেখে সেলাই, কী বললেন সেই চিকিৎসক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. নাজমা হক বলেছেন, হাসপাতালে রোগীর পেটের ভেতর গজ বা অন্য জিনিস রেখে অস্ত্রোপচার শেষ করার অনেক ঘটনা ঘটে। তবে বেশির ভাগ সময়ই তা রোগীর স্বজনদের জানতে দেওয়া হয় না।
সম্প্রতি ঢামেকে সন্তানের মা হওয়া পাপিয়া বেগম নামে এক নারীর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পর পেটের মধ্যেই বেশ কিছু গজ-ব্যান্ডেজ রেখে সেলাই করে দেওয়া হয়। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে সুস্থ হন সেই নারী।
পাপিয়া বেগম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ডা. নাজমা হকের তত্ত্বাবধানে। ফলে এই প্রসঙ্গে তাঁর কাছে জানতে চাইলে এনটিভি অনলাইনের কাছে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
ডা. নাজমা হক বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে প্রচুর রোগী, ভুলক্রমে এটা হয়। এটা কারো ইচ্ছাকৃত হয় না। আমাদের ঢাকা মেডিকেলে এমন অনেক ঘটনা হয়, আমরা এটা কাউকে বা রোগীর লোকদের এটা আমরা জানতে দেই না। এটা জানতে পারলে রোগীও মন খারাপ করে।’
গত ১২ সেপ্টেম্বর ঢামেকের অধ্যাপক ডা. নাজমা হকের তত্ত্বাবধানে আরেক চিকিৎসক ডা. সালমা চৌধুরী অন্তঃসত্ত্বা পাপিয়ার অস্ত্রোপচার করেন। এর মাধ্যমে একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন পাপিয়া। জন্মের পর সন্তান সুস্থ থাকলেও অসুস্থ হয়ে পড়েন পাপিয়া। কিন্তু অস্ত্রোপচারের মাত্র দুদিন পরেই অসুস্থ পাপিয়াকে ঢামেক থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
১৪ সেপ্টেম্বর বাসায় ফেরার পর বেড়ে যায় পাপিয়ার পেটব্যথা। এক পর্যায়ে ২০ সেপ্টেম্বর তাঁকে আবার ঢামেকের বহির্বিভাগে দেখানো হয়। তখন সেখানকার চিকিৎসক জানান, রোগীর অবস্থা ভালো নয়। তাঁকে দ্রুত গাইনি বিভাগে ভর্তি করতে বলা হয়। গাইনি বিভাগে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চিকিৎসা নেন পাপিয়া। এরপরও কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় চলতি মাসের ৫ তারিখ তাঁকে রাজধানীর গ্রীন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর স্বামী স্বামী আবদুল লতিফ। স্ত্রীকে বাঁচাতে তিনি ডা. নাজমা হকের কাছেই তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বারে আলাদাভাবে দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. নাজমা হকের চেম্বারে নেওয়া হলে পাপিয়াকে দেখে রেগে যান তিনি। গালাগালি করে পাপিয়া ও তাঁর স্বামীকে চেম্বার থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ করেন আবদুল লতিফ।
এরপর সেন্ট্রাল হাসপাতালে আরেক ডাক্তার অধ্যাপক ডা. জেসমিন আরা বেগমের অধীনে ১৩ অক্টোবর পাপিয়াকে ভর্তি করা হয়। সেদিন সন্ধ্যা ৭টায় পাপিয়ার পেটে আবার অস্ত্রোপচার করে পেট থেকে একটি বড় আকারের গজ (অপারেশনের সময় রক্ত পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত) বের করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. নাজমা বলেন, ‘বাইরে থেকে অপারেশন করে আসলেও আমরা এ রকম অনেক মপ (অস্ত্রোপচারের সময় ব্যবহৃত গজ হিসেবে পরিচত একধরনের কাপড়, যা মোটা করে ভাঁজ করে রক্ত পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করা হয়) পাই। কিন্তু সেটা আমরা লিখিত রাখি না। আর এই সিজার আমি করি নাই, করেছে ডা. সালমা চৌধুরী। কিন্তু রোগীর পেটে এটা স্বাভাবিকভাবে রাখার কথা না, তার পরেও যদি ভুলক্রমে রেখে থাকে, তবে এই দায়ভার তাঁকেই নিতে হবে।’
অবশ্য পেটের মধ্যে গজ রেখে অস্ত্রোপচার শেষ করার বিষয়ে জানতে ডা. সালমা চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।