কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের নানা অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবকে নিয়মতান্ত্রিক, দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি মিলানায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার অ্যাডভোকেট মারুফ আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের বিভিন্ন অনিয়মের কথা উল্লেখ করে তা নিরসনে পাঁচ দফা দাবি জানান তিনি। এসব দাবি পূরণে জেলা প্রশাসককে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে জেলার সব সাংবাদিককে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য করা, সাংবাদিকদের ভোটে সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত পদে ভোটগ্রহণ এবং অসাংবাদিক সদস্যদের ক্ষেত্রে শুধু তাদের জন্য সংরক্ষিত পদে ভোট দেওয়ার নিয়ম চালু করা, বর্তমান সভাপতিকে পরবর্তী কার্যকরী কমিটিতে রাখার বিদ্যমান আইন বাতিল, সাংবাদিকদের জন্য শক্তিশালী কল্যাণ তহবিল গঠন এবং নির্বাচনের আগেই বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করে পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে তা অনুমোদন করা।
লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মারুফ আহমেদ বলেন, ১৯৬৬ সালে সংবাদকর্মীদের সংগঠন হিসেবে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাব জন্ম নিলেও সেখানে নিয়মতান্ত্রিকতা, জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। সে কারণে প্রেসক্লাব সংবাদকর্মীদের প্রকৃত পেশাজীবী সংগঠন হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পার হলেও কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের কোনো গঠনতন্ত্র নেই বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সেখানে অভিযোগ করা হয়, নির্বাচিত নেতাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় সাধারণ সভা, সম্পাদকীয় প্রতিবেদন এবং বার্ষিক আয়-ব্যয়ের অডিট উপস্থাপন ও অনুমোদন প্রভৃতি কার্যক্রম না থাকায় সাধারণ সদস্যদের তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ও প্রতারিত করা হচ্ছে।
মারুফ আহমেদ বলেন, নামে প্রেসক্লাব হলেও প্রতিজন সাংবাদিক সদস্যের বিপরীতে প্রায় সাতজন অসাংবাদিক সদস্যের অন্তর্ভুক্তির কারণে সংগঠনটিকে একটি হাস্যকর জগাখিচুড়ি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। বিশাল বহরের এসব অসাংবাদিক সদস্যদের একটা বড় অংশই অযোগ্য ও অপ্রয়োজনীয় এবং বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করতেই তাদের সদস্য করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি সাইফুল হক মোল্লা দুলু লিখিত বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে দাবি আদায়ে সবাইকে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবকেন্দ্রিক আন্দোলনের আহ্বান জানান।
সাবেক সহসভাপতি আলম সারোয়ার টিটু কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাব সাংবাদিক বান্ধব না হওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের উদাহরণ দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জাজনক। তিনি প্রতিষ্ঠিত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফার্মের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের আর্থিক কার্যক্রম অডিট করার দাবি জানান।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ টি এম নিজাম প্রকৃত সাংবাদিকদের সদস্য না করে বাছ-বিচার ছাড়া অসৎ উদ্দেশে অসাংবাদিক সদস্য নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, প্রেসক্লাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য একই পরিবার থেকে বহুজনকে সদস্য করা হচ্ছে। তিনি প্রেসক্লাবের অনিয়ম নিরসনে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
এ সময় আরো বক্তব্য দেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুবীর বসাক, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তফা কামাল ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের কার্যকরী সদস্য অ্যাডভোকেট লুৎফুর রশীদ রানা, কিশোরগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শফিক আদনান ও সাধারণ সম্পাদক বিজয় রায় খোকা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক শরীফুল আলম (ডিবিসি ও সম্পাদক ওয়ান নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম), মাজহার মান্না (জনকণ্ঠ), আহমাদ আমিন (নয়া দিগন্ত), আব্দুল কাদির (মানবকণ্ঠ), এ জে এম ছালেহ বাবুল (দিনকাল), মো. আশরাফ আলী (দি এশিয়ান এজ), মানিক চন্দ্র দাস রনি ও আব্দুল আজিজ।