ভৈরবকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জের ভৈরবকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। আজ রোববার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকার দেশের শাসনভার গ্রহণ করার পর বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে বক্তব্য দেন। বিদ্যুৎ বিষয়ে তাঁর সরকারের আগামী পরিকল্পনারও সংক্ষিপ্ত ফর্দ তুলে ধরেন। তুলে ধরেন বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিদ্যুৎ বিষয়ক বিভিন্ন ব্যর্থতা। সমালোচনা করেন তিনি এদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসসম্পদ নিয়ে কিছু উন্নত দেশের নানা ছলাকলার।
প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধন ঘোষণা করার পর ভৈরব উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বক্তব্য দেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস। তিনি তাঁর বক্তব্যে ভৈরবকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলার আওতায় আনায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে উপজেলাটি দ্রুত উন্নতির দিকে ধাবিত হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। আর এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং বিদ্যুৎ, খনিজ সম্পদ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এমনি করে দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন কিশোরগঞ্জের প্রয়াত তিন কৃতী সন্তান মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণকারী মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও নারীনেত্রী শহীদ বেগম আইভী রহমানকে।
জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের একজন সুবিধাভোগীর কথা শুনতে চাইলে স্থানীয় হাজী আসমত কলেজের বিবিএ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী, শারীরিক প্রতিবন্ধী সাদ্দাম হোসেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায়। সাদ্দাম তাঁর বক্তব্যে বর্তমান সরকারের প্রতিবন্ধী কোটা এবং ভাতায় তার শিক্ষা গ্রহণের সুযোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এ সময় সাদ্দাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা, প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়া সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানায়।
ভৈরব উপজেলা পরিষদের ওই অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগ, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে অনুষ্ঠানটির সফলতায় সংশ্লিষ্ট ও উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা আহমেদ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভৈরবে ২২ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। এ উপজেলায় ১৪৯ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করে বিভিন্ন শ্রেণির ১২ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির সফল সমাপ্তি করা হলেও ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যুতায়নের এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধার উন্নয়নে বাজিতপুরের সরারচরে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) কর্তৃক একটি ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে যা আগামী ২০১৮-১৯ সাল নাগাদ শেষ হবে। এই অঞ্চলের বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে কুলিয়ারচরে চলমান একটি ১৫ এমভিএ ৩০/১১ কেভি উপকেন্দ্র ছাড়া আরো একটি ১০ এমভিএ উপকেন্দ্রের নির্মাণ শেষ হয়েছে। একইভাবে ৩৩ কেভি ও বিতরণ লাইনের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ চলছে। এরই মধ্যে আশুগঞ্জ গ্রিড থেকে ভৈরব পর্যন্ত পিডিবি কর্তৃক ৩৩ কেভি তৃতীয় সার্কিট চালু করা হয়েছে।
বাজিতপুরের সরারচরে ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত নরসিংদীর গ্রিড থেকে কুলিয়ারচর-ভৈরব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে ৪৮ কিলোমিটার ৩৩ কেভি লাইনের নির্মাণকাজ চলমান আছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ এ লাইনের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলে এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা আরো নির্ভরযোগ্য এবং নিরবচ্ছিন্ন হবে।