নওগাঁয় র্যাবের নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
নওগাঁর মান্দা উপজেলায় র্যাব-৫-এর হেফাজতে মোজাহারুল ইসলাম ওরফে জিএস (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
নিহত মোজাহারুল ইসলাম মান্দা উপজেলার কৈবর্ত্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
র্যাবের দাবি, মোজাহারুল অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন। গতকাল রাতে ছয়টি গুলিসহ তাঁকে আটকের পর অভিযানের সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রামেকে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে মোজাহারুলের বাবা আনিসুর রহমানের দাবি, মোজাহারুল এলাকায় জিএস নামেই পরিচিত। মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে ধরে নিয়ে র্যাব প্রকাশ্যে নির্যাতন করে। সেই নির্যাতনে তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
তবে মোজাহারকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে র্যাব ৫-এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মাহবুবুল আলম মুঠোফোনে জানান, গতকাল রাতে ছয়টি গুলিসহ মোজাহারকে আটক করা হয়। এর মধ্যে তিনটি বন্দুকের গুলি ও তিনটি ছিল পিস্তলের গুলি। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে মোজাহারুল জানান, তাঁর হেফাজতে আরো তিনটি অস্ত্র আছে। ওই অস্ত্র উদ্ধারে তাঁকে নিয়ে অভিযানের সময় গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। রামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, আজ বিকেলে হাসপাতালের লাশঘরে জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা সুলতানা নুসরার উপস্থিতিতে মোজাহারের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে পুলিশ। পরে তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়।
সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা সুলতানা নুসরা বলেন, মৃতের (মোজাহারুল) শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে সেই আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না তা ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এ বিষয়ে নিহত মোজাহারুলের বড় ভাই আজাহারুল ইসলাম, ভাবি নাহিদা আক্তার, ভগ্নিপতি ফোরকান হোসেন, কাশোপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াদ আলী মণ্ডল, প্রতিবেশী মারুফ আহমেদ ও আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে মান্দা সিংগীবাজারের অদূরে পচার মোড় থেকে মোজাহারুলকে আটক করেন র্যাব সদস্যরা। সেখানে তাঁকে বেদম মারপিট করা হয়। পরে রাত ৮টার দিকে র্যাব সদস্যরা তাঁকে কৈবর্ত্যপাড়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। র্যাব সদস্যরা বাড়িতে প্রবেশের সময় পরিবারের সদস্যরা বাধা দিলে তাঁদের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীসহ স্বজনদের দাবি, মেজর মুরাদ পরিচয়দানকারী র্যাব কর্মকর্তার নেতৃত্বে আট-দশজন র্যাব সদস্য মোজাহারুলকে বাড়ির দোতলায় তাঁর কক্ষে নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বেধড়ক মারপিট করেন। এ সময় তাঁর চিৎকারে আশপাশের শতাধিক লোকজন সেখানে জড়ো হন। পরে অস্ত্র উদ্ধারের নামে রাত ৯টার দিকে তাঁকে নিয়ে গ্রামের কবরস্থান, আমবাগান, কলাবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় দফায় দফায় মারপিটে মোজাহারুল কয়েকবার অচেতন হারিয়ে ফেলেন। এভাবে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাঁকে পেটানো হয়। অস্ত্র উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে র্যাব সদস্যরা তাঁকে আবার বাসায় ফিরিয়ে আনেন। এ সময় প্রতিবেশী আমিনুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান নামে দুই ব্যক্তিকে মোজাহারুলের দোতলার ঘরে নিয়ে ছয়টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করে ছবি উঠিয়ে নেয় র্যাব। পরে রাত ১টার দিকে মোজাহারুলকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আসাদুজ্জামান জানান, মোজাহারুলকে মৃত অবস্থায় জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান জানান, র্যাব কিংবা নিহত যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো মামলা করা হয়নি। মোজাহারুলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ নেই।