‘গণহত্যা’ থেকে রোহিঙ্গাদের হেফাজতের মোনাজাত শোলাকিয়ায়
মিয়ানমানের সামরিক বাহিনীর ‘গণহত্যা’ থেকে সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের হেফাজত করার জন্য কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঈদগাহ ময়দানের লাখ লাখ মানুষ আল্লাহর দরবারে করুণ প্রার্থনায় দুই হাত তুলেছেন।
আজ শনিবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম ঈদুল আজহার এই জামাতে ইমামতি করেন শামছুদ্দিন ভূঁইয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতি হিবজুর রহমান। ঈদের জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট ও এক মিনিট আগে বিধি অনুযায়ী তিনটি শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এবার শোলাকিয়ায় ছিল ১৯০তম ঈদ জামাত।
এ বছর নিরাপত্তার কারণে ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ার মাঠে যাওয়ার অধিকাংশ সড়ক ছিল বন্ধ। মুসল্লিরা প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে সকাল থেকে শোলাকিয়ায় আসেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও নামাজিদের উৎসাহের কমতি ছিল না।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আজিমুদ্দিন বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন খান জানান, উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হাজার হাজার মুসল্লির অংশগ্রহণে সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, পেশাজীবী, নেতারাসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ এই জামাতে অংশ নেন।
নামাজ শেষে মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে মুসলমানদের রক্ষা ও তাদের হেফাজত করাসহ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
এসপি আনোয়ার হোসেন খান জানান, ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের পাশে গত বছরের ঈদের জামাত চলাকালীন জঙ্গি হামলার পর এবার ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে চার স্তরের নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তিন প্লাটুন বিজিবিসহ র্যাব, পুলিশ, আনসার বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে মাঠে ঢুকতে দেওয়া হয় মুসল্লিদের।
সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকেই কিশোরগঞ্জে জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহে জামাতে অংশগ্রহণ করতে মুসল্লিদের ঢল নামে। এ সময় কয়েক ঘণ্টার জন্য আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঈদ জামাতে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। এর একটি ট্রেন ভোর পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং অপর ট্রেনটি সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে ছেড়ে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি নিয়ে কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া মাঠের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।
মসনদ ই আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হযরত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির ওপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছর অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’ মাঠ। উচ্চারণ বিবর্তনে যা এখন শোলাকিয়া মাঠ নামেই পরিচিত।