এক সপ্তাহে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে : আইওএম
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতার পর সেখান থেকে পালিয়ে প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম নর-নারী ও শিশু বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
আজ বুধবার সকালে আইওএম এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, এই সংখ্যা একেবারে সঠিক নয়। তবে তাদের ধারণা, এই সংখ্যক রোহিঙ্গা গত এক সপ্তাহে নদী, সমুদ্র পেরিয়ে কক্সবাজারের উপকূলবর্তী বিভিন্ন গ্রাম ও শরণার্থী শিবিরে প্রবেশ করেছে।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ পালিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসতে থাকে। সীমান্তে তাদের বাধা দেয় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক সপ্তাহে শত শত রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
পালিয়ে আসা নারী-পুরুষদের অনেকেই সীমান্ত এলাকায় বসে আছে। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে অসহায় জীবনযাপন করছে তারা।
এর মধ্যেই আজ আইওএম কক্সবাজার প্রধান সংযুক্তা সাহানি বলেন, ‘আমাদের ধারণা, গত এক সপ্তাহে ১৮ হাজার (রোহিঙ্গা) এসেছে। এটা বৈজ্ঞানিক তথ্যনির্ভর নয়। কারণ, আমরা কোনো জরিপ বা শুনানি করতে পারিনি। তবু মোটামুটি দেখেছি ১৮ হাজারের মতো চলে এসেছে।’
‘তাঁরা লেদা, কুতুবপালং, বালুখালির গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। শরণার্থী ক্যাম্পে তাঁরা আসছেন, যাচ্ছেন’, যোগ করেন সাহানি।
আইওএম কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে (শূন্যরেখায়) অনেকে আছে, কিন্তু সেখানে গিয়ে গণনা করার কোনো সুবিধা নেই। ফলে গণনা ছাড়া প্রকৃত সংখ্যা কেউ বলতে পারবে না। তবে শত শত মানুষ সেখানে খোলা আকাশের নিচে আছে। আমরা চেষ্টা করছি, তাদের সহায়তা করতে। কারণ, জীবন রক্ষা করা প্রথম দাবি। জীবন বাঁচাতে যে সহায়তা দরকার, আমরা সেটাই দেবো। কতজন আসছে, কারা আসছে, তাদের নিয়ে কী করা হবে সেটা পরের ব্যাপার। এ মুহূর্তে আমরা তাদের জীবন রক্ষার সহায়তা দিচ্ছি।’
মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
এরপর ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তাকর্মীদের সংঘর্ষে প্রায় একশ জন নিহত হয়। এর মধ্যে ১২ নিরাপত্তাকর্মী ও বাকিদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছে মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতার কার্যালয়।
গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য মারা যান। অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনা ঘটে।
জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের গ্রামে আগুন দিয়ে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে এক পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালের জুনেও মিয়ানমারে সম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রান্ত রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। ওই সময় সরকার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শক্ত অবস্থান নেয়। যার ফলে ওই সময়ে সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা পুশব্যাক করা হয়।