‘ঈদে একটা কাপড় ভিক্ষা পাইছিলাম, তা-ও চুরি গেছে’
‘বাবা গো সারা দিন যা পাইছি হেই টাকাও নিল। একটা কাপড় ছিল তাও নিয়া গেল। যদি কাপড়টা অন্তত রাইখা যাইত গো...’
ঈদের দিন বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ফুটপাতে বসে এই বলে কান্না করছিলেন ষাটোর্ধ্ব নারগিস আক্তার। তাঁর বিলাপ চলতে থাকে, ‘অহন পরমু কী?... হায় আল্লাহ গরিবের লাইগ্যা বুঝি দুইন্ন্যাত কিছুই নাই।’
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘বাবা কাওরান বাজারের ফুটাপাতে থাকি। ঈদের দিন আজ সকালে ভিক্ষা কইরা একটা কাপড় পাইছি, জমানো টাকাসহ এক হাজার টাকা ছিল। দুপুর বেলা একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ মাথার নিচে রাইখা ঘুমাইছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি কাপড় ও টাকা রাখা ওই ব্যাগটা আর নাই।’
‘চোরে টাকা নিয়ে গেছে কিন্তু যদি আমার শাড়িটা রাইখা যাইত, তাহলে আমি গোসল করতে পারতাম। অহন এক কাপড়ে আমি থাকমু কেমনে?’ যোগ করেন নারগিস আক্তার।
নারগিস আক্তারদের গ্রামের বাড়ি ছিল জামালপুর জেলা। তিন বছর আগে নদীভাঙনে ঘরবাড়ি গেছে। এর পর থেকে ঢাকায় এসে স্বামীসহ কারওয়ান বাজারের ফুটপাতে থাকেন। তিন মেয়ে আগেই গ্রামে বিয়ে দিয়েছেন। তারা এখন আর খোঁজখবর নেয় না। স্বামী টিবি রোগে আক্রান্ত। পরিবার-পরিকল্পনা ভবনের নিচের ফুটপাতে রাত কাটান। বৃষ্টি হলে কোনোমতে বসেই রাত কাটে তাঁদের।
নারগিস জানালেন, রোজার মাসে ভিক্ষা করে ‘ভালোই টাকা আয়’ হইছে। খাওয়া-দাওয়া খুঁজে যা পান তা দিয়ে তাদের দুজনের জীবন চলে। গোসল করেন পাঁচ টাকা দিয়ে কাঁচাবাজার মার্কেটের হাউসে। টাকা না থাকলে হাতির ঝিলে গোসল করেন।
ঈদের দিনে সকালে সামান্য মুড়ি খেয়ে দুপুর পর্যন্ত ছিলেন নারগিস। টাকা চুরি হওয়ায় এখন খাওয়ার মতো কিছুই নেই। তিনি বলেন, ‘আজ শনিবার ঈদের দিন সকাল থেকে মসজিদের সামনে ভিক্ষা করে এবং আগের জমানো টাকা মিলে এক হাজার টাকা হইছিল। সঙ্গে আমার স্বামীর একটা শার্ট ও আমার শাড়ি ছিল। ঈদের দিনে নতুন শাড়ি পরমো ভাবছিলাম। কিন্তু চোরে আমার সব নিয়ে গ্যাছে।’