গেটম্যান, বাস ও ট্রেনের চালককে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাস-ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় গেটম্যান হেলাল, ট্রেনচালক ও বাসচালককে অভিযুক্ত করে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্তে ওই লেভেল ক্রসিংয়ে কর্তব্যরত গেটম্যান, ট্রেনের ও বাসের চালককে অভিযুক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ দুর্ঘটনা এড়াতে আটটি সুপারিশও করা হয় প্রতিবেদনে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও ভৈরব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা আহমেদ।
এর আগে গত শনিবার ভৈরবে বাস-ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় গেটম্যান হেলাল মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক তদন্তে দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা নেয় বলে জানিয়েছিলেন রেলওয়ের ভৈরব বাজারঘাটের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব।
দুর্ঘটনার দিন রাতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাস ভৈরবে এসে দুর্ঘটনাস্থল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন। পরে তিনি ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হোসেনকে আহ্বায়ক এবং ভৈরব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা আহমেদকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিতে সদস্য রাখা হয় ভৈরব সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, বাংলাদেশ রেলওয়ের ভৈরবের সহকারী প্রকৌশলী, অফিসার ইনচার্জ ভৈরব হাইওয়ে থানা, সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন), বিআরটিএ, কিশোরগঞ্জ, স্টেশন অফিসার, ভৈরব ফায়ার সার্ভিস। তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
গত রোববার তদন্ত কমিটির প্রধানের নেতৃত্বে অন্য সদস্যরা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত প্রতিদেনটি তৈরি করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে নেওয়ার সময় ভৈরব বাজার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার এই দুর্ঘটনার জন্য কর্তব্যরত গেটম্যান এবং বাসচালকের অবহেলাকে দায়ী করেন।
ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, দুর্ঘটনায় কবলিত বাসটি ছিল ফিটনেসবিহীন। লেভেল ক্রসিংয়ে গিয়ে বাসটি অচল হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী জানান, লেভেল ক্রসিংয়ে কর্তব্যরত গেটম্যান সবুজ পতাকা ওঠালে ট্রেনের হুইসেল বাজিয়ে সিগন্যাল দিয়ে ট্রেনের লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ট্রেনের চালক এসব কিছু না দেখে লেভেল ক্রসিং পার করেন। সড়ক ও জনপথের ভৈরবের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জানান, কর্তব্যরত গেটম্যান বয়োবৃদ্ধ। তিনি সময়মতো গেট ফেলেননি।
এ ছাড়া তদন্তের সময় দুর্ঘটনাস্থলের কাছের ও আশপাশের প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হয়। তাঁরা জানান, ট্রেনটি লেভেল ক্রসিংয়ে আসার আগে তাঁরা গেট ফেলাসহ গেটম্যানের এ সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম দেখেননি। এদিকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া গেটম্যান হেলাল মিয়া জানান, স্টেশন অফিস থেকে ট্রেন আসা সংক্রান্ত কোনো তথ্য ওই সময় তিনি পাননি।
গত শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভৈরবের শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর লেভেল ক্রসিংয়ে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলগামী ঈশাঁখা পরিবহন সার্ভিসের একটি বাস রেললাইন অতিক্রমের সময় ময়মনসিংহ থেকে ভৈরবগামী একটি লোকাল ট্রেন বাসটিকে ধাক্কা দিলে বাসটি ছিটকে পড়ে যায়। এতে বাসে থাকা অন্তত ৩০ যাত্রী আহত হয়।
খবর পেয়ে হাইওয়ে থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তা আহতদের উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে ছয়জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠান চিকিৎসক।