বেতনের জন্য হাহাকার, বিজেএমসির ‘সিদ্ধান্ত’ আসেনি

ঈদের এক সপ্তাহের কম সময় বাকি। কিন্তু এখনও বেতন ও বোনাস পাননি শিল্পনগরী খুলনার বিভিন্ন শিল্প কারখানার ৫৭ হাজার শ্রমিক। ঈদে কেনাকাটার পরিবর্তে এসব শ্রমিককের পরিবারে এখন কেবলই হাহাকার। বেতন বোনাসের দাবিতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি পাটকলে শুরু হয়েছে আট ঘণ্টার ধর্মঘট।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন, মজুরি ও বোনাস পাননি। এমনকি ঈদের আগে ওই অর্থ পাওয়া যাবে কি না তাও কেউ জানেন না। মঙ্গলবার পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বিজেএমসি। এ অবস্থায় আলিম জুট মিলসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া পরিশোধ ও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে ঈদের নামাজ আদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শ্রমিকরা প্রতিদিন বেতন-বোনাসের দাবিতে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন করছেন। আর এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা শিল্পাঞ্চল। হতাশ শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে সরকারি কল ও কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীদের বকেয়া বেতন, মজুরি ও বোনাস দেওয়ার কথা থাকলেও খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘বেতন বোনাস না পেয়ে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত নয় পাটকলে ৫৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। কারখানাগুলো হচ্ছে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুল, দৌলতপুর, আলীম, ইস্টার্ন জুটমিল এবং যশোরের জেআই ও কারপেটিং জুটমিল। বেতন ও বোনাসের দাবিতে এ দিনই প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন।’
জাকির হোসেন আরো বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের সঙ্গে ঐক্য পরিষদের বৈঠক হয়। বৈঠকে মন্ত্রী ঈদের আগে সব বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দেন। কিন্তু মন্ত্রীর সে আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা চরম হতাশ।’
আলীম জুট মিল সিবিএ সভাপতি আব্দুস সালাম জমাদ্দার বলেন, ‘ঈদের আগে পাওনা পরিশোধ না হলে ঈদের জামাত রাজপথে। আর ঈদের পর লাগাতার রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।’
এ ব্যাপারে বিজেএমসির উপ মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি ও বোনাস দেওয়ার বিষয়ে আমার কাছে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
এদিকে বেতন-বোনাস না পেয়ে খুলনার বন্ধ হয়ে যাওয়া দাদা ম্যাচ, মহসেন জুটমিল ও হার্ডবোর্ড মিলের দুই হাজার শ্রমিক পরিবার চলছে অভাব-অনটনে। ঈদ, পূজা এসব তাদের কাছে অর্থহীন শব্দ। খেটে খাওয়া এসব মানুষ বর্তমানে বেকার দিন কাটাচ্ছেন।
দাদা ম্যাচ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম শাহাদাৎ বলেন, ‘আমাদের কোনো ঈদ নেই। কেবল আছে কষ্ট। ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট বন্ধ ঘোষণা করা হয় দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি। হঠাৎ মিল বন্ধের ঘোষণায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে মিলের ৭৫০ শ্রমিক-কর্মচারীর মাথায়। মিলটি চালুর জন্য তারা অনেক আন্দোলন করেছেন। ২০১১ সালের ৫ মার্চ খুলনার এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্যাক্টরিটি চালুর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু মিলটি আজও চালু হয়নি।’
খুলনার হার্ডবোর্ড মিলের শ্রমিক আবদুস সালাম বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে বন্ধ মিলের ৩০০ শ্রমিকের মুখে হাসি নেই। মিল বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কাছে ঈদ আনন্দ বলে কিছু নেই। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারছি না। দিতে পারছি না ঈদের জামা।’ বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন তিনি।
এ দিকে ঈদের আগে সরকারি কল-কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-মজুরি ও বোনাস প্রদানের কথা থাকলেও খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি পাটকলের শ্রমিকরা তা না পাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ কার্যালয়ের এক সভা থেকে এ ধর্মঘটের ডাক দেন।