তারেক সালমনকে হাতকড়া পরানো হয়নি : পুলিশ
বরগুনার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমনের হাতে পুলিশ কোনো হাতকড়া পরায়নি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, ভিত্তিহীন অভিযোগে কর্মরত একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের এবং পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর উদাসীনতার কারণে উক্ত কর্মকর্তাকে যে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য এবং নিন্দনীয়। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ইউএনও গাজী তারিক সালমনের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।
আজ শনিবার বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম ওই বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃত করার কথিত অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক আগৈলঝাড়া বর্তমানে বরগুনা সদরের ইউএনও গাজী তারিক সালমনের জামিন নামঞ্জুর/মঞ্জুর বিষয়টি বিভিন্ন মহল, গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, ভিত্তিহীন অভিযোগে কর্মরত একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের এবং পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর উদাসীনতার কারণে উক্ত কর্মকর্তাকে যে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য এবং নিন্দনীয়। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ইউএনও গাজী তারিক সালমনের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছে। কতিপয় মহল থেকে ‘পুলিশ কীভাবে মামলা নিল? পুলিশ মামলা নিল কেন? পুলিশ তাকে কেন গ্রেপ্তার করল?’ এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো এই যে, বর্ণিত বিষয়ে কোনো থানাতেই কোনো মামলা রুজু হয়নি এবং পুলিশ গাজী তারিক সালমনকে গ্রেপ্তারও করেনি। প্রকৃত তথ্য হলো কথিত অবমাননার অভিযোগে অভিযোগকারী বিজ্ঞ আদালতে দণ্ডবিধির ৫০১ ধারায় সিআর মামলা নম্বর ৪২৭/১৭ রুজু করেন। সিআর মামলা রুজু করলে আদালত থেকে তাঁকে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়। সমনের পরিপ্রেক্ষিতে গাজী তারিক সালমন আদালতে হাজির হলে বিজ্ঞ আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করেন। এক্ষেত্রে কোনো পর্যায়েই পুলিশের কোনো ভূমিকা রাখার অবকাশ ছিল না। কোনো কোনো গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ‘পুলিশ কেন তাঁকে হাতকড়া পড়াল?’ মর্মেও কতিপয় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যা সঠিক নয়। পুলিশ গাজী তারিক সালমনকে কোনো হাতকড়া পড়ায়নি। গাজী তারিক সালমনের সঙ্গে পুলিশের ছবি ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হবে। যেহেতু এ বিষয়ে প্রকাশিত ছবি এবং ভিডিওসহ নানা ধরনের দালিলিক প্রমাণ রয়েছে, সেহেতু কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির অবকাশ নেই। কারো কারো বক্তব্যে পুলিশ রেগুলেশনের ৩৩০ বিধি অমান্যপূর্বক গাজী তারিক সালমনের ওপর বল প্রয়োগ করে টেনেহিঁচড়ে কোর্ট হাজতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে, যা তথ্যনির্ভর নয় বলে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ‘এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, পুলিশ এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই বল প্রয়োগ কিংবা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়নি। এ প্রসঙ্গে গাজী তারিক সালমন কর্তৃক বিবিসিকে দেওয়া বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘আমাকে ঠিক গ্রেপ্তার করা হয়নি, আমার জামিনের আবেদন কোর্টে নামঞ্জুর করা হয়। তারপর আমাকে কোর্টের গারদখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। তখন আমি পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম দয়া করে আমাকে একটু সময় দিন, আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানোর সুযোগ দিন। আমার অনুরোধে পুলিশ আমার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ করে দেয়।’
সারা দেশে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে জননিরাপত্তা রক্ষাসহ নাগরিক সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, আগামীতেও পুলিশ বিভাগের প্রতিটি সদস্য পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে প্রশাসন ক্যাডারসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইন ও বিধির আলোকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাবে বলে মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
গত ৭ জুন ইউএনও তারিক সালমনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়েদুল্লাহ সাজু। মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়, জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্কিৃত করে ছাপা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বিকৃত ছবি দেখে মর্মাহত হয়ে তিনি পাঁচ কোটি টাকার মানহানির অভিযোগে মামলা করেন।
ওই মামলায় বিবাদী ইউএনও গাজী তারিক সালমনকে সমন দেওয়া হয়। গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে আদালতে হাজির হন ইউএনও। তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠানোর আদেশ দেন জেলার মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম মো. আলী হোসাইন। প্রায় তিন ঘণ্টা কোর্টহাজতে থাকার পর দুপুর ২টায় আবার তাঁকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন একই বিচারক।