ভৈরবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
‘নির্মল বায়ু, শুদ্ধ প্রাণ-বেশি করে গাছ লাগান’-এই স্লোগানকে ধারণ করে মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করেছে ভৈরবের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (বিছাস)। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ভৈরবের শিক্ষার্থীদের সামাজিক সংগঠন এটি।
বাংলা শ্রাবণ মাসের প্রথম দিনে আজ রোববার স্থানীয় সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজ, রফিকুল ইসলাম মহিলা অনার্স ও হাজী আসমত কলেজ চত্বরে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু করা হয়। চলবে পুরো শ্রাবণ মাস। নানাজাতের ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা হবে ভৈরবের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাসে।
আপাতত এক হাজার গাছের চারা সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি পাপিয়া ইসলাম রুপু ও সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম রাহিম জানান, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসকে তাদের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আওতায় আনতে গিয়ে যদি আরো চারার প্রয়োজন হয়, তবে তারা নতুন করে চারা সংগ্রহ করবেন।
কর্মসূচির আওতায় আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে গাছের চারা রোপণ করেন সংগঠনের কর্মীরা। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জয়নাল আবেদীনসহ কলেজের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি রাকিব হোসাইন, রায়হান রহমান দ্বীপ, রাজিব আহমেদ, সদস্য আবীর, স্নিগ্ধা, জায়েদুল, নাইম, সজীব ও জাহিদ হাসান প্রমুখ।
গাছের চারা রোপন শেষে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জয়নাল আবেদীন তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানান, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বনায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। জলবায়ু পরিবর্তনের এই কুফল সময়ে বিশ্বের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বনায়নের বিকল্প নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের এই মহৎ কর্মসূচিকে তিনি সাধুবাদ জানান।
পরে রফিকুল ইসলাম মহিলা অনার্স কলেজে গাছের চারা রোপণ করা হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. রফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক সত্যজিৎ দাস ধ্রুব, নিরাপদ সড়ক চাই ভৈরব শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলাল উদ্দিনসহ শিক্ষক-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় কলেজ চত্বরে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নেন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আহ্বায়ক ও সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান উদয়, ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক সুমাইয়া বিনতে মোস্তফা, সদস্য রিদম, আশিক, পিয়াল, ইমরান, রনি, সৌরভ, সোহেল, সাথী ও কুমি প্রমুখ।
কলেজ প্রতিষ্ঠাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বৃক্ষরোপণ করেই থেমে থাকলে চলবে না। পরবর্তী সময়ে খোঁজ রাখতে হবে, রোপণ করা গাছের চারাটি তরতরিয়ে বেড়ে উঠছে নাকি রোদে শুকিয়ে মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। এ সময় তিনি উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন জানান এমন একটি সময়োপযোগী কর্মসূচি পালনে উদ্যোগী হওয়ায়।
কলেজ অধ্যক্ষ, বিশিষ্ট শিশু সংগঠক শরীফ আহমেদ বলেন, তরুণদের বিপথগামীতার এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের কর্মীরা সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন নিয়ে যে কর্মসূচি পালন করছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তরুণদের তারুণ্যই পারে নতুনের জন্ম দিতে-এই আশাবাদ পোষণ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের কাছে ভৈরববাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি। তারা সেই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
একইদিন বিকেলে ভৈরবের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাজী আসমত কলেজ ক্যাম্পাসেও গাছের চারা রোপণ করে সংগঠনটি। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আকম মোবারক আলীসহ কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
‘বৃক্ষ আমাদের মমতাময়ী মায়ের মতো আগলে রাখে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা থেকে শুরু করে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আমরা পেয়ে থাকি এই বৃক্ষ থেকে। এ ছাড়া পুষ্টি থেকে শুরু করে রোগ নিরাময়ের প্রয়োজনীয় ওষুধের কাঁচামালের উৎস এই বৃক্ষ। গাছের ফুল, ফল আর শীতল ছায়া আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের প্রয়োজনীয়তা থেকেই আমরা এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।’ বললেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতি পাপিয়া ইসলাম রুপু।
জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল থেকে আমাদের চারপাশকে রক্ষায় গাছের বিকল্প শুধুই গাছ-এ কথা জানিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম রাহিম বলেন, ‘১৯৮২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ স্থাপনের পর থেকে সংগঠনটি নানাবিধ সমাজ উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। তবে বর্তমান পরিচালনা পরিষদ মনে করছে বৃক্ষরোপণ এই মুহূর্তে একটি অগ্রাধিকার কাজ। তাই আমরা মাসব্যাপী এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।’ তিনি তাঁদের এই কর্মসূচিতে যাঁরা সহযোগিতা করছেন তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।