‘গণধর্ষণ শেষে কেরোসিন ঢেলে হত্যা’, স্বামীসহ আসামি ১১

যাত্রাশিল্পী সোমা বিশ্বাসকে বিয়ে করেছিলেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বাসিন্দা সাইফুল্লাহ গাজী। এর আগে সোমা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর নাম রাখা হয় টুম্পা খাতুন। ঘটনার দিন স্বামীর সঙ্গে বাসায় ছিলেন তিনি। গভীর রাতে বেশ কয়েকজন লোক ঘরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করে এবং গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যা করে।
এসব কথা উল্লেখ করে গতকাল বৃহস্পতিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ জোয়ার্দার আমিরুল ইসলামের আদালতে মামলা করা হয়। এর বাদী আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম। তিনি নিহত টুম্পার ধর্মভাই বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে আইনি ব্যবস্থা নিতে আশাশুনি থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন দিয়েছেন বিচারক।
মামলায় নিহতের স্বামী সাইফুল্লাহ গাজীসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের সাইফুল্লাহ গাজী, একই গ্রামের রিপন সরদার, আবু মুছা, খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম, দুর্গাপুর গ্রামের কামরুল ইসলাম, তাঁর ভাই আনারুল ইসলাম, লাভলু গাজী, মহসিন সরদার, খায়রুল ইসলাম, চেউটিয়া গ্রামের কবীর হোসেন ও খুলনা জেলা শহরের সোনাডাঙ্গা গোবরচাকা মেইন রোডের চিশতি। এ ছাড়া আরো অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গোপালগঞ্জ জেলার বটবাড়ি গ্রামে বাড়ি সোমা বিশ্বাসের। পাঁচ বছর আগে আশাশুনির দুর্গাপুর গ্রামে যান যাত্রায় অভিনয়ের জন্য। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যান সাইফুল্লাহ গাজী। এরপর সোমাকে ধর্মান্তরিত করে তাঁর নাম দেওয়া হয় টুম্পা খাতুন। সাইফুল্লাহ গাজী তাঁকে বিয়ে করেন। এসব কাজে সহযোগিতা করেন খাজরা ইউপির চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম।
এজাহারে আরো বলা হয়, সাইফুল্লাহর প্রথম স্ত্রী বর্তমানে খাজরা সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য তমেনা খাতুন। কিছুদিন আগে সাইফুল্লাহ আরেক যাত্রাশিল্পীকে বিয়ে করেন। এ নিয়ে বর্তমানে তাঁর স্ত্রী ছয়জন। বিষয়টি নিয়ে টুম্পার সঙ্গে সাইফুল্লাহর বিরোধ চলে আসছিল। প্রতিবাদ করায় সাইফুল্লাহ টুম্পাকে নির্যাতন করতেন। গত ৯ জুন রাত ৩টার দিকে টুম্পা তাঁদের বাগদা চিংড়ির হ্যাচারির বাসায় স্বামীর সঙ্গে ছিলেন। এ সময় স্বামীর সহায়তায় চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমসহ কয়েকজন তাঁকে ধর্ষণ করেন। পরে তাঁরা টুম্পার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। রাতেই তাঁকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত ১৬ জুন মারা যান টুম্পা। তাকে পিরোজপুরে দাফন করা হয়। আদালত মৃত্যুর কারণ কারণ জানতে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ফরহাদ হোসেন বলেন, টুম্পা তাঁর মৃত্যুর আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধর্ষণের বিষয়টি বাদী শহীদুল ইসলামকে জানিয়েছিলেন। এ সময় তিনি চেয়ারম্যান ডালিমসহ অন্যদের কথা উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিদুর রহমান শাহিন জানান, আদালতের নির্দেশ হাতে পেলেই পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করবেন তাঁরা।