যে সরকার শহীদ মিনারে হামলা চালায়, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নয়
যে সরকার শহিদ মিনারে হামলা চালায়, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নয়, বলে মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আজ বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তেল-গ্যাস-খনিজ-সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এ কথা বলেন আনু মুহাম্মাদ।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের শহীদ মিনারে সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারী কবি আরিফ বুলবুলসহ পাঁচ সংস্কৃতিকর্মীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা।
সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শহীদ মিনারে হামলা হয়, আর যে সরকার চুপ থাকে, যে সরকারের লোকজন শহীদ মিনারে হামলা করতে পারে, সেই সরকার কী করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সরকার হয়?’
‘শহীদমিনারে হামলা এটা প্রমাণ করে, যে তারা যে পথে আগাচ্ছে সেটা হচ্ছে উল্টো পথ। আজকে সরকার উন্নয়নের নামে যা করছে, যত দ্রুত তাকে অগ্রসর হতে দেখছি আমরা, ততই বাংলাদেশকে বিপর্যয় ও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবীরা চুপ থাকলে, কিছু কিছু বুদ্ধিজীবীরা তাদের মাথা বিক্রি করলেও, তরুণরা যে মাথা বিক্রি করে নাই, জনগণ যে মাথা বিক্রি করে নাই, এই অনেক বাধা-বিপত্তি-আক্রমণ সত্ত্বেও সুন্দরবন আন্দোলনের কর্মবিস্তার তার প্রমাণ।’
সমাবেশে উপস্থিত বক্তারা দাবি করেন, এর আগে সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসীরা কয়েকবার হামলা চালিয়ে কর্মীদের মারধর করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যে সব সন্ত্রাসী বাহিনী নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংস্থার অনুষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর ও কর্মীদের মারপিট করেছে তারাই কবি আরিফ বুলবুলসহ অন্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
এর আগে বুধবার দুপুরে সদর মডেল থানায় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক রফিউর রাব্বী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। তবে পুলিশ এই ঘটনায় হামলাকারী কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মামলার বাদী রফিউর রাব্বী এজাহারে উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমাবেশ শেষে শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি অমল আকাশ, কার্যকরী সদস্য শিল্পী শাহীন মাহমুদ, প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য কবি আরিফ বুলবুল, ছড়াকার আহম্মেদ বাবলু ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তি লাঠিসোটা, লোহার মোটা রড ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীদের হামলায় কবি আরিফ বুলবুলসহ চারজন আহত হন।
কবি আরিফ বুলবুলের মাথায় সিটি স্ক্যান ও অন্যান্য পরীক্ষা করিয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে ঢাকার পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান মিয়া জানান, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে হামলার সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলাকারীদের শনাক্তের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বুধবারের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যু- বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক রফিউর রাব্বী, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস, সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসসের প্রধান প্রতিবেদক কবি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায় প্রমুখ।