শিশু অপহরণের অভিযোগে ৫ জন গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থেকে শিশু অপহরণের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১৪। আজ শনিবার সকালে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ক্যাম্পটির কোম্পানি কমান্ডার মেজর শেখ নাজমুল আরেফিন পরাগ।
গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন হলেন শরীফ (৪০), শফিক (৪০), সাব মিয়া (৪০), আল আমিন (৫০) ও শফিকুল ইসলাম (৩২)। এঁদের বিরুদ্ধে র্যাব বাদী হয়ে মামলাও করেছে বলে জানানো হয়।
র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ২০ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সিনেমা হল রোড এলাকা থেকে মো. আশিক হাসান হৃদয় (১২) নামের এক শিশুকে অপহরণ করে একটি চক্র। এ বিষয়ে হৃদয়ের বাবা শাহজাহান মিয়া ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি জানান, চক্রটি মোবাইল ফোনে তাঁর কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে তাঁর ছেলেকে হত্যার হুমকিও দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে র্যাবের একটি গোয়েন্দা দল তৎপরতা বাড়িয়ে চক্রটি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে।
গোয়েন্দা তৎপরতা চলার সময়েই ২ মে একই এলাকা থেকে সাদেক মিয়া (১২) নামে আরো একটি শিশু অপহরণ করে ২০ লাখ মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। গোয়েন্দা অনুসন্ধান ও মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে র্যাব জানতে পারে, চক্রটি সুসংগঠিত একটি অপহরণকারী চক্র। যারা সারা দেশে বিভিন্ন সময়ে শিশু-কিশোর অপহরণের সঙ্গে জড়িত ও অপহরণের পর মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকে।
এই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের ভৈরব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর শেখ নাজমুল আরেফিন পরাগের নেতৃত্বে র্যাব গত ৯ জুন বাঞ্ছারামপুর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রাম থেকে মো. রফিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর বাসা থেকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির জন্য ব্যবহৃত মোবাইলসহ মোট চারটি মোবাইল উদ্ধার করে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মো. রফিক মিয়া অপহরণের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পরে গত ৯ জুন তাঁকে বাঞ্ছারামপুর থানায় হস্তান্তর করে র্যাব।
পরে রফিকের দেওয়া তথ্য এবং মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গত ১৭ জুন অপহৃত হৃদয়ের মোবাইল ফোনসহ বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিনকে ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়া এলাকা থেকে আটক করে র্যাব। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই এরপর ২১ জুন কোম্পানি কমান্ডার মেজর শেখ নাজমুল আরেফিন পরাগ ও এএসপি জুয়েল চাকমার নেতৃত্বে একই উপজেলার জগন্নাথপুরের মতিমিয়ার বাড়ি থেকে মামলার অন্যতম আসামি একই দশদোনা গ্রামের মো. রাশেদ এবং চরকান্দা দড়িবাঞ্ছারামপুর গ্রামের বিশ্বজিৎ দাস ওরফে পবনকে আটক করা হয়। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে রাশেদ ওই অপহরণের সঙ্গে নিজের ও তাঁর বাবা মো. রফিকের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। সেই সঙ্গে বিশ্বজিৎ দাস পবনের নামে নিবন্ধন করা দুটি মুঠোফোন থেকে দুই অপহৃতের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবির বিষয়টিও স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এই দুজনকেই থানায় হস্তান্তর করা হয়।
অপহৃতদের উদ্ধার ও অপহরণকারী চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় সাতটি মোবাইল ফোনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।