সিরাজগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত ১৫
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় গবাদি পশুর রোগ অ্যানথ্র্যাক্স মানবদেহে ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে এই রোগে ১৫ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত ২৯ মে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কালিয়াকৈর গ্রামে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পরে ৪ জুন বিষয়টি জানতে পেরে উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে একটি দল গঠন করে আক্রান্তদের বাড়িতে পাঠানো হয়।
অ্যানথ্র্যাক্স আক্রান্ত ১৫ জন হলো উপজেলার মোহনপুর মিলপাড়া গ্রামের আবদুল মজিদের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (৪৫), খোকন আলীর ছেলে কামরুল (১৪), কালিয়াকৈর গ্রামের মমতাজ প্রামাণিকের ছেলে শাহ আলম (৪০), আবদুল করিমের ছেলে আকরাম আলী (৩০), আবুল হোসেনের ছেলে আরিফ (৩৫), আবদুল কুদ্দুসের ছেলে মাসুদ (২৭), মুজা আকন্দের ছেলে আবদুস সামাদ (৫০), শাহীন আলীর মেয়ে রিমা (৩), বাহের আলীর স্ত্রী ফাতিমা (৭০), রানা প্রামাণিকের স্ত্রী রাশিদা (৩১), আবুল কাশেমের ছেলে হান্নান (৪০), হান্নান আলীর স্ত্রী জাহানারা (৩০), ছেলে বাদশা (১৪), শাহ আলমের মেয়ে সেতু (১০) ও মাহমুদ আলীর ছেলে সিয়াম (১০)।
উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় এলাকা সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মে উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কালিয়াকৈর গ্রামের হাজি আবুল হোসেন তাঁর অসুস্থ গরু জবাই করে গ্রামবাসীদের মধ্যে কম দামে বিক্রি করেন। এই মাংস কাটাকাটি ও নাড়া-চাড়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রথমে হাত-পা-চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো ক্ষত ও ঘায়ের মতো দেখা দেয়। ওই মাংস কাটা ও রান্নার কাজে যুক্তরা পাঁচদিনের মধ্যেই অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হন। স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আক্রান্তরা জানতে পারে অ্যানথাক্স রোগ হয়েছে।
এরপর গত ৪ জুন উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক দল ঘটনাস্থলে পৌছে ১৫ জন অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত করেন। এরপর থেকেই মেডিকেল টিম গঠন করে আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনার পর উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ গরুটির মালিককে রোগাক্রান্ত গরু জবাই করার কারণে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এলাকায় মাইকিং করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর থানার জন্তিহার গ্রামেও আরো বেশ কয়েকজন অ্যানথাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাফরুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের চিকিৎসকদল কালিয়াকৈর গ্রামটি পরিদর্শন করেন। আক্রান্তরা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের দল আক্রান্ত এলাকায় চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কালিয়াকৈর গ্রামের অ্যানথ্র্যাক্স আক্রান্ত শাহ আলম ও আকরাম আলী জানান, গরুর মাংস কাটা ও নাড়াচাড়া করার পর থেকে হাতে ফোসকা দেখা দেয়। একদিন পরে তা ঘায়ে রূপান্তর হয়। তাঁর মেয়ে তিনদিন স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধ খেয়েও ভালো হয়নি। পরে স্থানীয় স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ভর্তি করলে তারা চিকিৎসা দেয়। এখন শিশুটি সুস্থ।
এর আগে ২০১৬ সালের মে মাসে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের চর কৈজুরী, পোরজনা ইউনিয়নের জামিরতা ও কায়েমপুর ইউনিয়নের সড়াতৈল গ্রামে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ পর্যাক্রমে ৭৮ জন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া ওই সময় জেলার কামারখন্দ ও উল্লাপাড়া উপজেলাতেও অ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।