‘লাশ নয়, ছবি দেখে শনাক্ত পরিচয়’
মৌলভীবাজারের ফতেপুরে (এলাকাটি নাসিরপুর নামেও পরিচিত) জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে তাদের পারিবারিক একটি ছবি দেখে, লাশ দেখে নয়। কারণ লাশগুলো ছিল খুবই বিকৃত।
আজ সোমবার দুপুরে এমন তথ্যই জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ শাহজালাল।
তার কিছু আগেই দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে তাঁর মেয়ে শিরিনা আক্তার, মেয়েজামাই লোকমান হোসেন ও পরিবারের অন্য পাঁচ সদস্যের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন লাশ দেখেন। যাদের মধ্যে চারজনই শিশু। আবু বক্কর সিদ্দিক লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতির কথাও জানান।
এসব বিষয়ই পরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘ঘোড়াঘাট থেকে যাঁরা এখানে এসেছেন, তাঁরা লাশগুলো দেখেছেন।
কিন্তু তাঁরা লাশগুলো সেভাবে শনাক্ত করতে পারেননি। কিন্তু আমাদের কাছে ঘটনাস্থলের একটি ঘর থেকে পাওয়া একটি ছবি ছিল। যাঁরা এখানে নিহত হয়েছেন, তাঁদের একটি পারিবারিক ছবি ছিল। আমরা তাঁদেরকে সেই ছবিটি দেখিয়েছি।’
‘পাশাপাশি এই ছবিটা আমরা ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককেও দেখিয়েছি। তত্ত্বাবধায়ক বলেছে, এটা এখানকার ভাড়াটিয়াদের ছবি। ঘোড়াঘাটের লোকজনও বলেছে, এটাই তাদের আত্মীয়-স্বজনদের ছবি। সে ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হতে পেরেছি, যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের বাড়ি ঘোড়াঘাটে’, যোগ করেন পুলিশ সুপার।
এর আগে বেলা পৌনে ১১টায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রাম থেকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পৌঁছান আবু বক্কর সিদ্দিক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন ও লোকমানের ভায়রা ভাই সানোয়ার হোসেন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতাল মর্গে লাশ শনাক্তের পর কাঁদতে কাঁদতে বের হতে দেখা যায় আবু বক্কর সিদ্দিককে।
পুলিশ জানিয়েছে, এখানে মোছাম্মাৎ শিরিনা আক্তার, তাঁর স্বামী লোকমান হোসেন, তাঁদের বড় মেয়ে মোছাম্মাৎ আমেনা খাতুন, মেয়ে সুমাইয়া, মরিয়ম, ফাতেমা, খাতিজা (সাত মাস) লাশ রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরেই পরিবার থেকে ‘এক ধরনের’ বিচ্ছিন্ন ছিল।
গত ২৯ মার্চ থেকেই মৌলভীবাজারের ফতেপুরের আস্তানাটি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন সেখানে শুরু হয় ‘অপারেশন হিট ব্যাক’। অভিযান শেষে সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন করেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
পুলিশের এ কর্মকর্তাও জানিয়েছিলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, কাল যখন সোয়াট অভিযান শুরু করে তখন তারা পালানোর পথ নাই, তখনই তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে স্বপরিবারে আত্মহনন করেছে। ডেডবডির বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে। আর কোনো ডেডবডি আসলে অক্ষত নেই। সেগুলো দুটি রুমে ছড়িয়ে পড়ে আছে। সেগুলোর মাথা ও পা একেকটা একেক জায়গায়। সেগুলা মিলেই আমাদের কাছে মনে হয়, সাত-আটটি ডেডবডির অংশ হতে পারে।”