১৪৫ বছরে রাজশাহী কলেজ

বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হয়েছে রাজশাহী কলেজের ১৪৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস। ‘এসো মিলি আলোকের ঝর্ণাধারায়’ স্লোগানে আজ শনিবার সকালে কলেজের শহীদ মিনার থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়।
শোভাযাত্রাটি নগরীর সোনাদীঘির মোড় দিয়ে জিরো পয়েন্ট হয়ে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে কেক কেটে প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়।
কলেজ শহীদ মিনারের সামনে বেলুন উড়িয়ে ও কেক কেটে দিবসটির উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। পরে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণা ও কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবদুল খালেক, অর্থনীতিবিদ ও রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক পদার্থবিজ্ঞানী অরুণ কুমার বসাক। অনুষ্ঠানে রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ আল-ফারুক চৌধুরীসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
দেশ সেরা রাজশাহী কলেজ
১৮৭৩ সালের ১ এপ্রিল স্থাপিত রাজশাহী কলেজ ব্রিটিশ আমল থেকেই শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের মর্যাদা পেয়ে এসেছে। বিখ্যাত এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বরেন্দ্র অঞ্চলের জমিদারদের উদ্যোগে। রাজশাহী শহরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত এই কলেজের ইতিহাস। ১৯৩৩ সালে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরা পড়ার সুযোগ পায় এ কলেজে। সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি কলেজ পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের করা র্যাংকিংয়ে বর্তমানে এক নম্বরে অবস্থান করে নিয়েছে রাজশাহী কলেজ।
অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান বলেন, ২০১৫ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোর ফলাফল, পঠন-পাঠন, পরিবেশসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে র্যাংকিং ঘোষণা করে। এতে রাজশাহী কলেজ এক নম্বরে স্থান করে নেয়। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছর ও এ বছর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে রাজশাহী কলেজকে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি কলেজের মধ্যে এক নম্বর শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে পুরস্কৃত করেছে। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রাজশাহী কলেজ এইচএসসি, ডিগ্রি ও অনার্স-মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফলে সারা দেশের সব কলেজের মধ্যে এক নম্বর অবস্থান ধরে রেখেছে। কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা ২২ হাজার ৭০০।
ক্যাম্পাসে বাহারি ফুলের বাগান ও বৃক্ষ
রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে গেলেই যে কারো মন জুড়িয়ে যাবে। সেখানে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় একাধিক বৃক্ষসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আর বাহারি ফুলের বাগান। ক্যাম্পাসে ঢুকেই দেখা যাবে বাউন্ডারি ওয়ালে রয়েছে উত্তরাঞ্চলের ঐতিহাসিক নানা স্থাপনা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশের যে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছিল, সেটিও রয়েছে এই বিদ্যাপিঠে।
কলেজের পেছনের ইতিহাস
দুবলহাটীর রাজা হরলাল রায় বাহাদুরের আর্থিক সহায়তায় ১৮৭৩ সালে স্থাপিত হয় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্থাপনের অল্প সময়ের মধ্যেই কলেজটি তৎকালীন পূর্ববঙ্গ, উত্তরবঙ্গ, বিহার, পুর্নিয়া ও আসামের একমাত্র উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৮৭৩ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহী জেলা স্কুলে (বর্তমানে কলেজিয়েট স্কুল) উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের এফএ (ফার্স্ট আর্টস) শ্রেণি চালুর মাধ্যমে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৭৫ সালে এফএ পরীক্ষা দিয়ে কলেজের দুজন ছাত্র প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। প্রথম ব্যাচে একজন মুসলমানসহ মাত্র ছয়জন ছাত্র নিয়ে কলেজের যাত্রা শুরু হলেও ১৯৩০ সালে ছাত্রসংখ্যা এক হাজারে উন্নীত হয় এবং এর পরবর্তী বছরে ছাত্রী ভর্তির অনুমতি পাওয়া যায়।
রাজশাহী জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হরগোবিন্দ সেন ছিলেন এই কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ। রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমদানাথ রায় বাহাদুর স্নাতক কোর্স চালু করার জন্য কলেজে দেড় লাখ টাকা দান করেন। ১৮৭৭ সালের অক্টোবর মাসে রাজশাহী কলেজে স্নাতক কোর্সের স্বীকৃতি পায় ও ১৮৭৮ সালে সেখানে কোর্সটি চালু হয়।
কলেজের প্রথম ভবন বর্তমানে যা প্রশাসনিক ভবন, সেটি ১৮৮৪ সালে ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত হয়। একজন ইংরেজ প্রকৌশলীর পরিকল্পনায় গাঢ় লাল বর্ণের দোতলা এ ভবনটি নির্মাণে খরচ হয় ৬১ হাজার ৭০০ টাকা। পি এন হোস্টেল কলেজের প্রথম হোস্টেল, যা রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা ১৮৯৪ সালে নির্মিত হয়। ১৯০২ সালে পুঠিয়ার রানি হেমন্তকুমারী তাঁর নামে একটি হোস্টেল নির্মাণ করেন।
ক্যাপশন
রাজশাহী কলেজের ১৪৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। ছবি : এনটিভি