৭ মাস ধরে স্বজনবিচ্ছিন্ন নিহত ‘জঙ্গি দম্পতি’

সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানায় নিহত কামাল উদ্দিন ও জোবাইরা ইয়াসমিন দম্পতির বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর প্রায় সাত মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেননি তাঁরা।
আজ শনিবার নিহত ইয়াসমিনের মা জান্নাত আরা জানান, প্রায় নয় মাস আগে ওই দম্পতি বাইশারী ইউনিয়নের যৌথ খামারপাড়ার বাড়ি থেকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে চট্টগ্রামে চলে যান। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি। এর কয়েকদিন পর তাঁর ছেলে জহিরুল হক চট্টগ্রামে বোন-জামাতার বাড়ি যান। এর কিছুদিন পর জহিরুল তাঁর স্ত্রী ও ছোট বোনকে নিয়ে সেখানে যান। চট্টগ্রামে চলে যাওয়ার পর এক মাস পরিবারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু প্রায় সাত মাস ধরে তাঁরা নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের কোনো ধরনের খোঁজ তাঁরা পাননি।
এদিকে, সীতাকুণ্ডে জঙ্গি হামলায় হতাহতদের খোঁজে আজ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি বাইশারীতে যৌথ খামারপাড়ায় যায় পুলিশ। নিহত দম্পতির বাড়িতে গিয়ে তাঁদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। তাঁদের বাড়ি তল্লাশি করার খবর পাওয়া গেছে।
জোবাইরা ইয়াসমিনের বাবা নূরুল আলম বলেন, স্ত্রীসহ সন্তান নিয়ে প্রায় ৩০ বছর আগে মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর থেকে বাইশারী ইউনিয়নের যৌথ খামারপাড়ায় যান তিনি। সেই থেকে ওই গ্রামেই তাঁরা বসবাস করছেন। তাঁর ছেলে জহিরুল হক, মেয়ে জোবাইরা ইয়াসমিন এবং মেয়ের জামাতা কামাল খুবই ধার্মিক ছিলেন। তাঁরা এলাকায় পানের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
নূরুল আলম আরো বলেন, পানের বরজে কাজ শেষে সন্ধ্যার পর জহিরুল ও কামাল প্রায়ই হাসান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। বন্ধুর মতোই সম্পর্ক ছিল তাঁর সঙ্গে। কিন্তু কোন বিষয়ে কথাবার্তা হতো, তা জানতেন না।
অপরদিকে, কামালের বাবা মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা থেকে ১০ বছর আগে তাঁরা বাইশারীতে যৌথ খামার গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। কামালের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ নেই।
বাইশারী ইউপির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, যৌথ খামারপাড়াতে বসবাসকারীরা অধিকাংশই বহিরাগত। দুর্গম জনপদ হওয়ায় সেখানে ভাসমান লোকদের চলাচল বেশি। বহিরাগতদের চলাচল ঠেকাতে বাইশারী ইউনিয়নের প্রবেশমুখে পুলিশের তল্লাশি চেকপোস্ট বসানোর দাবি জানান তিনি।
বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) আবু মুসা বলেন, বাইশারীর যৌথ খামার গ্রামের কামাল, জুবাইরা, জহিরুল হকসহ অন্য সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে বাইরে গিয়ে নিখোঁজ আছে। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আগে থেকে করা হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো ধরনের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়নি।
এসআই বলেন, সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানায় হতাহতদের মধ্যে কয়েকজনের বাড়ি বাইশারীতে, এই খবর পেয়ে তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জঙ্গি হামলায় নিহত ইয়াসমিনের বাড়ি তল্লাশি করে জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
গত বৃহস্পতিবার সীতাকুণ্ডে চার ঘণ্টার অভিযানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ এবং গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়।