এবারও দেখা দিয়েছে গমের ‘ব্লাস্ট রোগ’
গত বছরের মতো এবারও গমে ‘ব্লাস্ট’ রোগ দেখা দিয়েছে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একাধিক জেলায় গমের ক্ষেতে ওই রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত গমের ক্ষেতের ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ হ্রাস পায়।
আজ সোমবার গাজীপুরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে গবেষকরা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ উদ্ভিদ রোগবিজ্ঞান সমিতি ওই সেমিনারের আয়োজন করে।
এ সেমিনারে বারির মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ড. আবুল কালাম আযাদ বলেন, ‘গত বছর থেকে গমের ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। এ বছরও এ রোগটির আক্রমণ দেখা গেছে। রোগটি ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম ব্রাজিলে দেখা যায় পরবর্তী সময়ে তা দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগের ছত্রাক আমাদের দেশে কীভাবে এসেছে তার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা নেই। এশিয়ার মধ্যে আমাদের দেশেই প্রথম গত বছর গমের এ রোগটি দেখা দেয়। এ রোগের প্যাথোজেন চুপ করে বসে থাকে না, সে সুযোগ খুঁজে ফসলকে আক্রমণ করার জন্য। আমরা উদ্ভিদ রোগতত্ত্ববিদগণও বসে থাকতে পারি না। আমাদের নতুন নতুন রোগ দমন ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা ও সম্প্রসারণ করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
সেমিনারে বিজ্ঞানীরা জানান, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলা জেলায় এ রোগের আক্রমণ দেখা যায়। যা মোট গম আবাদী জমির প্রায় তিন শতাংশ। আক্রান্ত গম ক্ষেতের ফলন শতকরা ২৫-৩০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে এ রোগের কারণে ক্ষেতের সম্পূর্ণ ফসল বিনষ্ট হতে পারে। এ বছরও এ রোগ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা গেছে। এ রোগ দমনের জন্য প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে ৬ গ্রাম নাটিভো ৭৫ ডব্লিউ জি অথবা নভিটা ৭৫ ডব্লিউ জি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে ‘স্প্রে’ করতে হবে। এতে গমের পাতা ঝলসানো রোগ, বীজের কালো দাগ রোগ এবং মরিচা রোগ ইত্যাদিও দমন হবে।
বাংলাদেশ উদ্ভিদ রোগবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ও ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারির দিনাজপুরের গম গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পরিতোষ কুমার মালাকার। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম, বারির উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল মনসুর। সেমিনারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।