আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি কমান্ডার রউফকে স্মরণ

ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি কমান্ডার (অব.) আবদুর রউফের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সামাজিক সংগঠন উৎসর্গ সমাজ কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে ভৈরব প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংগঠনের সভাপতি ও হাজি আসমত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ কে মোবারক আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন আবদুর রউফের মেয়ে লেখক ও নাট্যকার গিতালী হাসান, সিপিবির ভৈরব উপজেলা সভাপতি আবু তাহের মাস্টার।
এ সময় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য দেন কমান্ডার আবদুর রউফের সহধর্মিণী কানিজ ফাতেমা, ভৈরব প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান বাচ্চু, হাজি আসমত স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান কাঞ্চন, সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।
স্মরণসভায় কমান্ডার আবদুর রউফের কর্ম ও সৃষ্টিশীল জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, ক্ষণজন্মা এই মহানায়ক আরো কিছুটা দিন বেঁচে থাকলে সমাজ, রাষ্ট্র এবং জাতি অনেক উপকৃত হতো।
কমান্ডার আবদুর রউফকে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান পরোপকারী হিসেবে আখ্যা দিয়ে বক্তারা আরো বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কমান্ডার (অব.) আবদুর রউফের জীবন ও কর্ম বিষয়ে জানতে হবে। তাঁর জীবন থেকে তাদের শিখতে হবে। তাঁর মতো দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে।
কমান্ডার আবদুর রউফ নৌবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৬৮ সনে ৩ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন। এই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ না করায় তাঁর উপর সীমাহীন দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়। পরবর্তীতে তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। ’৬৯-এর ১১ দফা আন্দোলনের গণদাবির চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান ১৯৬৯ সনে ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ১৪ মাস কারাবাসের পর জাতীয় বীরের সম্মান নিয়ে মুক্ত জীবনে ফিরে আসেন তিনি। এ সময় তিনি ভৈরব এলাকায় শক্তিশালী ন্যাপ (মোজাফফর) গড়ে তোলেন।
এ ছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে আবদুর রউফের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলায় ক্র্যাফটস ইনস্টিটিউট কার্যালয় স্থাপন করে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের তরুণদের মুক্তিবাহিনীতে ভর্তি করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। বামপন্থী গেরিলা বাহিনীর তিন সদস্যের পরিচালকমণ্ডলীর তিনি ছিলেন অন্যতম পরিচালক।
আলোচনা শেষে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হয়। অনুষ্ঠানের সার্বিক সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম।