‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা’য় নেই বিদেশি স্টল
ময়মনসিংহ জেলা শহরে চলছে ‘ময়মনসিংহ আন্তর্জাতিক শিল্প ও বাণিজ্য মেলা’। এ মেলার প্রচারের জন্য জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে তোরণ করা হয়েছে। সেগুলোতে বড় অক্ষরে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটি লেখা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেই ‘আন্তর্জাতিক’ মেলায় নেই কোনো বিদেশি স্টল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশি বিভিন্ন স্টলে কিছু চীনা পণ্য আছে। এসব পণ্যের মান নিয়েও আছে প্রশ্ন।
গত ২৩ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধন করা হয়। নগরীর কাছারিঘাট বালুচরে চলছে মাসব্যাপী এই মেলা। উদ্বোধনের দিন থেকেই এই মেলার আন্তর্জাতিক নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মূলত ক্রেতা টানতেই মেলায় ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য অনেকেই দায়ী করেছেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মুজিবুর রহমান বেলালকে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জুতা, শাড়ি, ইমিটেশনের গয়না, খেলনা, গৃহস্থালি পণ্য, খাদ্যসামগ্রী অধিকাংশ স্টলেই বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় সপরিবারে যান ময়মনসিংহ সদরের বোরর চরের সাইফুল, শম্ভুগঞ্জের কাজল ও শহরের সানকিপাড়ার মাহবুব। তাঁরা এনটিভি অনলাইনকে জানান, দেশি নিম্নমানের পণ্যই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
কেন কিনলেন—প্রশ্ন করা হলে তাঁদের একজন হেসে উত্তর দেন, শহরের পাশেই মেলা। বড় বা ছোট মেলায় কেনাকাটার একটি ঝোঁক থেকেই আসা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক পরিচালক ও ‘আলোকিত ময়মনসিংহ’ পত্রিকার সম্পাদক প্রদীপ ভৌমিক বলেন, তিনি শুনেছেন, মেলায় ‘ছোট মেয়েদের’ বয়স্ক নারীদের শরীরের অবয়ব দিয়ে (কৃত্রিম) নাচানো হচ্ছে। এটি অনৈতিক কাজ ও প্রতারণা। তা ছাড়া স্থানীয়ভাবে আয়োজিত মেলাকে ‘আন্তর্জাতিক’ মোড়ক দেওয়া হয়েছে।
মেলায় ১১০টি স্টল স্থান পেয়েছে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী এখন পর্যন্ত কাস্টমস বিভাগের কোনো স্টল বসতে দেওয়া হয়নি। পরিশোধ করা হয়নি প্রযোজ্য ভ্যাটও।
এ বিষয়ে ‘কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট’-এর ময়মনসিংহ বিভাগের সহকারী কমিশনার মেহরাজুল আলম সম্রাট বলেন, তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এখনো আয়োজকরা সরকারি ভ্যাট পরিশোধ করেননি। নিয়ম অনুযায়ী, স্টল ও টিকেটিং খাতে শতকরা ১৫ শতাংশ এবং পণ্য বিক্রয় খাতে শতকরা ৪ শতাংশ ভ্যাট দেওয়ার কথা থাকলেও এক টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। তিনি নিজে কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে মেলাস্থলে গেছেন। প্রতিদিন তাঁর কর্মকর্তারা মেলায় গিয়েও ভ্যাট আদায় করতে পারছেন না। নিয়ম থাকলেও বসতে দেওয়া হয়নি তাঁদের স্টল।
মেলার সার্বিক দায়িত্বে থাকা কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মুজিবুর রহমান বেলাল বলেন, ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ মেলার আয়োজক হলেও তিনিই সব। মেলার শেষ সপ্তাহে ভ্যাট পরিশোধ করার নিয়ম। সময় হলেই দেবেন।
মেলার নানা বিষয়ে ময়মনসিংহ চেম্বারের সহসভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রহমান বলেন, ‘আসলে মেলা চেম্বারের হলেও বেলাল সাহেবই সব। উনার মতো করে মেলা চালানো আমাদের সম্ভব নয়। তাই উনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সব দায়িত্বই বেলাল সাহেবের।’
মেলায় বিদেশি স্টল নেই কেন—জানতে চাইলে ময়মনসিংহ চেম্বারের সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা থেকে চীনের চারটি প্রতিষ্ঠানের মেলার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা থেকে চলে গেছে। ‘এশিয়ান জোন’ নামে একটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান আছে। এটাতে চীনাসহ বিদেশি পণ্য আছে।
এ বিষয়ে কথা হয়েছে এশিয়ান জোনের দুই কর্ণধার চট্টগ্রামের চকরিয়ার ইয়াসিন ও কিশোরগঞ্জের সুমনের সঙ্গে। তাঁরা নিজেরাই এটিকে বিদেশি স্টল বলেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, এশিয়ান জোনে ভালো ব্র্যান্ডের দেশি পণ্য আছে।