ভুলে ভরা পাঠ্যবইয়ের প্রতিবাদে ভৈরবে মানববন্ধন
পাঠ্যবইয়ে ভুল, সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক বিষয় অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে এক শিশু-কিশোর মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন কাকলি খেলাঘর আসর এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
আজ শনিবার বেলা ১২টার দিকে ভৈরব পৌরসভার সামনে শহীদ মিনারের পাদদেশে অনুষ্ঠিত ওই কর্মসূচিতে সংগঠনটির কর্মীসহ শতাধিক শিশু-কিশোর অংশ নেয়।
কাকলি খেলাঘর আসর ভৈরবের সহসভাপতি অধ্যাপক সত্যজিৎ দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম রিপন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্বকে পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু পঁচাত্তরের বাংলাদেশে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ফুলে-ফেঁপে বিষবৃক্ষের রূপ লাভ করেছে। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় স্বাধীনতার পর তারা একে একে প্রবেশ করেছে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতির মধ্যে। আর এখন সুকৌশলে আধিপত্য বিস্তার করেছে আমাদের শিশুদের মনোজগতে। এক ভয়ানক সাম্প্রদায়িক বিষে আক্রান্ত আজ শিক্ষাব্যবস্থা। ২০১৭ সালের প্রথম দিনেই ছাত্রছাত্রীদের হাতে হাতে পৌঁছে যাওয়া পাঠ্যপুস্তকের ঝক্ঝকে মলাটের ভেতরে কী বীভৎস মৌলবাদী পরিকল্পনায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে সম্প্রদায় ও জাতিগত বৈষম্য এবং নারী ও পুরুষের বৈষম্য। ফলে বই উৎসব আর বই উৎসব থাকেনি। তা পরিণত হয়েছে মৌলবাদীদের অট্টহাসিতে। সুকৌশলে পাঠ্যপুস্তকে ঢুকিয়ে দিচ্ছে জঙ্গিবাদের সুপ্ত উপাদান।’
সাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমূলক ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক অবিলম্বে প্রত্যাহার, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী অপশক্তি তোষণ বন্ধ করাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত সংবিধানের চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের আদর্শের ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমিক মনন গঠনের পথরুদ্ধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন শাহ, সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, এম ওয়াজেদ আলী, হুমায়ুন আজাদসহ যেসব লেখকের লেখাগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সংযোজন করা, শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করা, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং ও বাংলা একাডেমির বানান বিধানের মধ্যে যে অসামঞ্জস্যতা আছে, তা দূর করে একটি স্থিতিশীল বানান কাঠামো প্রণয়ন করা ও দেশের শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে সংবিধানে উল্লেখিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী, গণমুখী ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষার জন্য উপযোগী পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা ইত্যাদি ছয় দফা দাবি তুলে ধরে বক্তব্য দেয় সংগঠনের ছোট্টবন্ধু রিদওয়ান মুস্তাফিজ আনন্দ।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছোট্ট বন্ধুদের মধ্যে বক্তব্য দেয় ঊষা রানী বর্মণ, সুমাইয়া বেগম সিনথিয়া প্রমুখ।
ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধন ও আলোচনা শেষে সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক সত্যজিৎ দাস বলেন, পাঠ্যবই থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা বাদ দেওয়া হলো। সত্যেন সেন, রণেশ দাসগুপ্তের মানবদর্শনের বোধ থেকে শিশুদের দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করা হলো। এম ওয়াজেদ আলীর ভ্রমণ কাহিনীকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের মিথ্যা ধুয়া তুলে বাদ দেওয়া হলো। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের একটি অনন্য মাধুর্যময় কবিতা তুলে দেওয়া হলো। কুসুমকুমারী দাসের কবিতায় সম্পাদনার নামে ছুরি চালানো হলো। কেন? এসব ঘটনা কিসের ইঙ্গিত বহন করে? বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের শিক্ষাব্যবস্থায় এমন ঘুণপোকা জাতির প্রত্যাশা নয়।