আইনজীবীর জামিন নাকচ, এজলাস ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া
চট্টগ্রামের আদালতে মানবপাচার মামলায় সস্ত্রীক এক আইনজীবীর জামিন নাকচ হওয়ায় বিচারকের এজলাস ও তাঁর কক্ষ ভাঙচুর করেছেন আইনজীবীরা।
আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়ার আদালতে এ ঘটনা ঘটে। ওই আইনজীবী হলেন জামাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিচারক দুজনের জামিন আবেদন নাকচ করলে আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া ও পাল্টাধাওয়া হয়। তবে আড়াই ঘণ্টা পর মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ পারভেজ ওই আইনজীবী ও তাঁর স্ত্রীকে জামিন দেন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মানবপাচারের একটি মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, বিকেলে দুজনকে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়ার আদালতে হাজির করা হয়। দুজনকে সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। আইনজীবীরা এ সময় জামাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রীকে শর্তসাপেক্ষে জামিনের আবেদন করেন। বিচারক জামিন নাকচ করেন। এরপর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আইনজীবীরা। এ সময় বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান। এর মধ্যে এজলাস ও কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ এলে আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
পরে প্রবীণ আইনজীবী ও সমিতির নেতারা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) মো. শাহজাহান কবিরের কাছে যান। বিচারক বিষয়টি মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ পারভেজের কাছে যেতে বলেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন দাব করেন, ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘আমাদের এক সহকর্মীকে সন্দেহজনকভাবে একটি মামলায় জড়িত করা হয়েছে। সমিতির নেতাদের হস্তক্ষেপে জামিন দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে বিচার বিভাগ ও আইনজীবী সমিতি একসঙ্গে কাজ করবে।’
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, আইনজীবী জামাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ সাতদিনের রিমান্ড চেয়েছে। মানবপাচারের এ মামলায় তিনজন আসামি ছিলেন। কিন্তু আইনজীবী ও তাঁর স্ত্রীর নামে কোনো ফরোয়ার্ডিং নেই। তিন আসামির কারো কাছে আইনজীবী জামালের একটি ভিজিটিং কার্ড ছিল। এ সূত্র ধরে তাকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ অ্যাডভোকেট জামালকে ফোন করে থানায় নিয়েছে।’
কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আইনজীবীরা আদালতে তাঁর জামিন আবেদন করেছি। আদালতকে জানালাম, এঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এটি বিবেচনা করে তাঁদের জামিন বিবেচনা করতে পারেন। আদালতকে আরো জানালাম, বিশেষ ক্ষমতায় এটি বিবেচনা করতে পারেন। তিনি বারের সদস্য ও সক্রিয় একজন আইনজীবী। আমরা এটা প্রিভিলেজ প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে প্রতিদিন আপনার আদালতে হাজিরা দেব। বিচারক জামিন নাকচ বলে আদালত থেকে নেমে পড়লেন। যাঁরা বয়সে তরুণ আইনজীবী, এতে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এতে একটু হৈ চৈ করে একটি জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেছেন। আমরা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা সিএমএমের রিকনসিডারেশন (পুনর্বিবেচনা) চেয়েছি। আমাদের প্রেয়ার (প্রার্থনা) তিনি বিবেচনা করেছেন। আরেকজন বিচারককে দিয়েছেন। বিচারক মেরিট কনসিডার করে দেখেছেন যে, এ আইনজীবীর বিরুদ্ধে কোনো কিছু নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো এফআরআইয়ে অভিযোগও নেই। তাই তাঁদের জামিন দিয়েছেন। সফলভাবে সব সমাধান হয়ে গেছে। কাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আদালতে আসবেন। আইনমন্ত্রীও থাকবেন। আমরা এ ঘটনা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করেছি। এটা অন্যভাবে নিউজ করার কোনো বিষয় নয়। কারো কষ্ট লাগলে আমরা দুঃখিত।’
বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘আমাদের এক সহকর্মীকে সন্দেহজনকভাবে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আসলে তিনি জড়িত নন। আমরা আইনজীবী সমিতি তাঁর জামিন চেয়েছি। আদালত জামিন দিয়েছেন। এখন অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী মুক্ত। আমাদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে।’ আগামীতে বিচার বিভাগ ও আইনজীবীরা একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে চলমান বিচারব্যবস্থাকে আরো সমৃদ্ধশালী করার জন্য কাজ করে যাবেন, এমন আশা করেন চট্টগ্রামের এই আইনজীবী।
এদিকে, আইনজীবীদের আদালতের এজলাস ও জানালা ভাঙচুরের পর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শাহেনুর ও সিএমএম মো. শাহজাহান কবির ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরে অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন জানান, তাঁর এক আত্মীয় বিদেশে যাচ্ছেন। তিনি তাঁকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। সেখানেই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।